• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ছাড়ছে ইসলামী দলগুলো!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩০, ২০১৭, ০৯:২২ এএম
বিএনপি ছাড়ছে ইসলামী দলগুলো!

ঢাকা: ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির সম্পর্ক নিবিড় বলে ধরে নেয়া হয়। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে বিএনপি বরাবরই ভোটের রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা নিত একচেটিয়াভাবে। বর্তমানে নানা ঘটনা পরম্পরায় সম্পর্কের এই সমীকরণ পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করছেন, ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে এই দুইটি দলের সম্পর্কে নতুন বিন্যাস লক্ষ করা গেছে। একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর পুরোনো সম্পর্ক ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। অপরদিকে, কৌশলী অবস্থান নিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ।

বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের অঙ্ক বিবেচনায় সরকারও এসব দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান হচ্ছে- নিজেদের পক্ষে নিতে না পারলেও অন্তত বিএনপির পক্ষে যাতে না যায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

জামায়াতকে বাদ দিয়ে ৩০০ আসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি

অপরদিকে, ইসলামী দলগুলোও এখন সুযোগ বুঝে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দরকষাকষির পর্যায়ে আছে। বিএনপির পক্ষে নেই, এমন অবস্থা বোঝানোর জন্য তারা পৃথক জোট গঠন করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া গুঞ্জন আছে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতেরও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক ইসলামি দলগুলোর এমন আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপিকে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত ২০-২৫ বছরের ভোটরে রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর অবস্থান বরারবই বিএনপির পক্ষে ছিল। বলতে গেলে, জামায়াতসহ যেসব ইসলামী দল দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছে, তারা সব সময় নিজেদের আওয়ামী লীগ বিরোধী বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত।

আওয়ামী লীগ ইসলামের পক্ষের দল নয়, এমন কথা দিয়ে বারবারই রাজনীতির বাজার মাত করত বিএনপি। নির্বাচনে এসব দল বিএনপির পক্ষেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বার বার।

কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আনতে পেরেছে সরকারি দল। দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকায় বিএনপির অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ে। বিএনপির এমন নাজুক পরিস্থিতি দেখে ইসলামী দলগুলোও নিজেদের অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান হয়ে পড়ে।

তাছাড়া এসব ইসলামী দলকে পক্ষে রাখার রাজনীতিও বিএনপি করতে পারেনি। তাই একটা পর্যায়ে দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছাকাছি চলে যায় তারা। তাদের চলে আসাটাও শাসক দল বিবেচনা করে ভোটের রাজনীতির জায়গা থেকে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী সিরাজ বলেন, বিএনপির প্রতি হতাশা থেকেই ইসলামী দলগুলো নিজেদের লাভ খুঁজতেই ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে। হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির ভালো একটা সম্পর্কও শেষ পর্যন্ত আছে কি না সন্দেহ। কারণ হেফাজত সরাসরি রাজনৈতিক দল না হলেও কওমী মাদরাসা কেন্দ্রিক একটা অনুসারী তাদের আছে। শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে প্রভাব রাখার চেষ্টা করছে সংগঠনটি।

সরকারও তাদের দাবি দাওয়া পূরণ করে আস্থায় নিতে চাচ্ছে। এটা সার্বিকভাবে বিএনপিরই ব্যর্থতা। কারণ বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তৈরি করতে না পারায় শরিকরা বা আস্থায় থাকা সমর্থকগোষ্ঠী সরে পড়ছে।

তাছাড়া ইসলামী দলগুলোর নেতাদের মাঝে যথেষ্ট অনৈক্য বিদ্যমান। এ জন্য ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ায় তারা পক্ষ পরিবর্তন করছে। তবে এতে করে দলগুলোর অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে উঠছে।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়ায় হতাশ বিএনপি। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে জামায়াতের ব্যাপারে কোনো নীতিতে এগুবে, এমন অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারায় জামায়াতও বিএনপির প্রতি হতাশ।

তাই বিএনপির অবস্থান জামায়াতের কাছে পরিষ্কার না হওয়ায় দলটির নেতারা খেপেছেন বিএনপির প্রতি। অন্যদিকে, বিএনপিতেও জামায়াতের ব্যাপারে বাড়ছে সন্দেহ। এমনই অবস্থার মাঝে বিএনপি প্রধান শেষ পর্যন্ত জামায়াতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে বক্তব্য রাখায় ক্ষুব্ধ জামায়াত।

ইসলামী দলগুলোর অধিকাংশই নিজেদের মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে। ২০ দলের সঙ্গে জামায়াতসহ যে কয়টি দল আছে তাদের সঙ্গে সুসর্ম্পক বিএনপির আছে। এটা নিয়ে বিএনপির ভাবনার কিছু নেই।

বিভিন্ন ইস্যুতে ২০ দলীয় জোটের এই বড় দুটি দলের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। দূরত্ব বাড়ছে দল দুইটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। সেই সঙ্গে জোটেও টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের অবস্থান কি হবে? এমন বিষয়ে জামায়াত বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি তাদের নেতাকর্মীদের।

অন্যদিকে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে ৩০০ আসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি, এমন খবরেও ক্ষুব্ধ জামায়াতের বর্তমান নেতারা। নির্বাচনে জামায়াতের বেশ কিছু নেতা স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে পারেন, এমন হিসেবও দলটির রয়েছে। কিন্তু জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে না।

এমনটা ধরে নিয়ে বিএনপিও নিজেদের মতো করে আসন ওয়ারী মনোনয়ন চূড়ান্তের পথে হাঁটায় মূলত দুই দলের দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। তবে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিষয়টি নিয়ে আরো বসবেন বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে জামায়াতকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানান, ‘গত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে প্রার্থী নিয়ে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলাপই করেনি। তাছাড়া সম্প্রতি সারাদেশে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেনি বিএনপি। অথচ স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের দলের নেতারা বরাবরই বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সেটা আর কত দিন।’

জোটের বাইরে থাকা অন্য দলের সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতা তৈরি করতে চায় বিএনপি

‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত এবার কম বেশি ৫০টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিতে প্রস্তুত রয়েছে। জোটগতভাবে এগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো শলা-পরামর্শও করা হচ্ছে না। বিএনপি একাই তাদের নির্বাচনী কর্মপন্থা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাবে শুধু বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়।’

দলের একটি সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটে থাকা অন্য ইসলামী দলগুলোও বিএনপির আচরণে ক্ষুব্ধ। আগামী নির্বাচনের বিএনপি তাদের কতটুকু ছাড় দেবে, তা এখনই জানতে চায় তারা।

তবে বিএনপি মনে করছে নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই এসব বিষয় প্রকাশ্যে কথা বলবে দলটি। তবে জোটের বাইরে থাকা অন্য দলের সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতা তৈরি করতে চায় বিএনপি। এক্ষেত্রে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে চায় না দলটি।

বিএনপির সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর সম্পর্কের টানাপোড়নের বিষয়টি মানতে রাজি নন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলোর অধিকাংশই নিজেদের মতাদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে। ২০ দলের সঙ্গে জামায়াতসহ যে কয়টি দল আছে তাদের সঙ্গে সুসর্ম্পক বিএনপির আছে। এটা নিয়ে বিএনপির ভাবনার কিছু নেই। বরং সরকারই ইসলামী দলগুলো নিয়ে রাজনীতি করতে চায়।

তবে হেফাজতের বিষয়ে তিনি বলেন, সংগঠনটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আর যেকোনো অরাজনৈতিক সংগঠন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসতে পারে এটা দোষের কিছু নয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!