• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি না এলেও নির্বাচনে অটল আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮, ১২:২৬ পিএম
বিএনপি না এলেও নির্বাচনে অটল আ.লীগ

ঢাকা: চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন না হলে সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না এ নিয়ে সংশয় তো আছেই। তার ওপর দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে।

দলটির নেতারা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না, এমনকি দেশে কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না। পাশাপাশি সরকারকে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে আলোচনায় বসার আহ্বান এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিএনপি নেতারা।

তবে বিএনপির এসব হুঁশিয়ারি, আহ্বান ও দাবি কিছুই আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় দিয়েছেন আদালত, এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।

খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ও তার দলের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বিএনপি যদি ইলেকশন না করে তাহলে কারো কিছু করার নেই। তারা গতবারও নির্বাচন করেনি। তারা বলেছিল ইলেকশনে আসবে, কিন্তু আসেনি। এবারো যদি কোনো দল ইলেকশনে না আসে, তাহলে আমাদের কী করার আছে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার শুরু থেকেই তার অবস্থানে পরিষ্কার। সংবিধানে যেভাবে আছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেভাবেই হবে। এর ব্যত্যয় ঘটবে না। কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য সংবিধান পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। তাই এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনারও সুযোগ নেই। আর খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি আদালতের; এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো হাত নেই। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না- সেটা দলটির নিজস্ব বিষয়। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। যেসব দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে; জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে- সরকার তাদের নিয়েই আগামী নির্বাচন করবে। নির্বাচন কারো জন্য ঠেকে থাকবে না। নির্বাচন কেউ ঠেকাতেও পারবে না।

আর আদালতের রায় নিয়ে আন্দোলনের নামে দেশ অস্থিতিশীল করার কোনো সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকার বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। বিএনপি যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে সরকার ততক্ষণ পর্যন্ত ছাড় দেবে। কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ করার সুযোগ দেবে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই সরকার এ পদক্ষেপ নেবে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা রাজনীতিতে সঙ্কট সৃষ্টি হয়নি। তাই তারা আগামীতেও নির্বাচন বর্জন করলে কোনো সঙ্কট হবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রায়ের একটি অংশে আছে- খালেদা জিয়ার অপরাধ রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধের শামিল। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ যিনি বা যারা করেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। আদালতের সিদ্ধান্তে বিএনপি চেয়ারপারসন যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন, সে অবস্থায় তাকে বা বিএনপিকে সরকার নির্বাচনে আনতে পারবে না।’

আদালতের আদেশেই সবকিছু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদালত যদি খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করার অনুমতি না দেন, তাহলে আওয়ামী লীগের কী করার আছে? সরকারের কী করার আছে? আজ যেখানে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধের দায়, সেখানে যদি নির্বাচন করার যোগ্যতা তিনি অর্জন না করেন, তাহলে সরকারের তো কিছু করার নেই। বিষয়টি আদালতের; সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না-এটা কোর্টের বিষয়। এটা নিয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। আগামী নির্বাচন বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার কোনো সিদ্ধান্ত দলের মধ্যে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন আসবে কি আসবে না, এটা একান্তই তাদের বিষয়। এখানে সরকারের বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার কী আছে। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ বেশ কিছু দল। একই দাবি নিয়ে আলোচনায় বসতে গত চার বছর সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে নবম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি। তবে সরকার তার অবস্থানে অনড় থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পার করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের পর বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন না করলেও বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলে তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হওয়ায় দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘দেশ রক্ষায়’ রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘কার সঙ্গে আলোচনা? কিসের জন্য আলোচনা? আমরা কেন বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করতে যাব? আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না।’

সোনালীনিউজ/জেএ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!