• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬, ১০:০৪ পিএম
বিএনপিকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচন নিয়ে এতোদিন যে অভিযোগ করতো, তার উপযুক্ত জবাব নারায়ণগঞ্জবাসী দিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার একটাই নির্দেশ ছিল, নির্বাচন হতে হবে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু। সাধারণ মানুষ যেন ভোটটা সঠিকভাবে দিতে পারে।’

সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পুনর্নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় আট বছর সরকারের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী আইভী। এর আগেও দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন আইভী।

ভোটে বিজয়ের পরদিন শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র। তাকে ভোট দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। এ বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুঝতে পেরেছেন। আইভী পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প নিতে পারবেন।’ 

সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নয়নের যে ক্ষতি হয়, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যেসব অর্জন করেছিল, তা ২০০৮ সালে এসে আর পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়ায় এটা হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বিদেশিদের সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় এলেন। দেশের সম্পদ লুট করলেন। তারা যাদের মন্ত্রী বানালেন, তারা রাজাকার। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচার হয়েছে। জাতির কাছে তারা এখন মুখ দেখায় কীভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন। দুর্নীতি-লুটপাটের জন্য আমেরিকার এফবিআই এসে তার ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তাতে তার সাজাও হয়েছে। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এখন মামলা ফেস করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি যদি কোনো অন্যায় না করে থাকেন, তবে মামলা ফেস করতে ভয় কীসের? তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন। দুর্নীতি না করলে এতো টাকা কোথায় পান?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত একটানা তারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। গাড়িঘোড়া, লঞ্চ, ট্রেন- কিছুই বাদ যায়নি। সব জায়গায় আগুন দিয়ে তারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। আওয়ামী লীগ গাড়ি ঘোড়া কিনে, তারা পুড়িয়ে দেয়। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, তারা যে অপরাধ করেছে তার জন্য তাদের কী শাস্তি হওয়া উচিত?’

বিএনপির জোটকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিয়েছে। মা তার মেয়েকে, স্ত্রী তার স্বামীকে, ছেলে তার বাবাকে মরতে দেখেছে। কলেজ ছাত্রছাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কাউকে বাদ দেয়নি। এদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না কেন? বিরোধী দলে থাকতেই যারা এভাবে মানুষের ওপর নির্যাতন করে, ক্ষমতায় এলে তারা কী না করবে। এদের আবার ভোট চাওয়ার অধিকার কোথায়?

বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের যে জনগণ ধরে পোড়ায় না, তার জন্য শোকর করেন।’ নারায়ণগঞ্জের মতোই আগামীতেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিজয়ী মেয়র আইভী বলেন, ‘আমার এ বিজয় আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, তাকেসহ সব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে উৎসর্গ করছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে নিরপেক্ষ ভোটের জন্য অবিচল ছিলেন। তার জন্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ভোটের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু ভোটের যে উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে, তা সারা দেশে অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন,‘প্রমাণ হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নারায়ণগঞ্জে যে উদাহরণ সৃষ্টি হলো, তা সারা বাংলাদেশে হবে।’

নাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী আইভী। এর আগে ২০১১ সালে নির্দলীয় ভোটে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমানকে প্রায় এক লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন তিনি।

বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনার পাশের চেয়ারে বসার আগে আইভী দলীয় সভানেত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ সময় শেখ হাসিনা আইভীর কপালে চুমু দেন। আইভী তার এই বিজয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি উৎসর্গ করেন।

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এলেও শামীম ওসমান ছিলেন না। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন ও মুহিবুল হক চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গণভবনে পৌঁছলে আইভীকে জড়িয়ে ধরেন শেখ হাসিনা। শুরুতেই আইভীকে নিয়ে মঞ্চে গিয়ে বসেন প্রধানমন্ত্রী। তার ডান দিকে বসেন আইভী এবং বাঁ পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বক্তব্যের শুরুতে কাঁপাকাঁপা গলায় আইভী বলেন, ‘আমি স্পিচলেস। যেদিন নেত্রী আমার হাতে নৌকা তুলে দেন, সেদিন আমি বলেছিলাম, ২২ তারিখ নেত্রীর হাতে এই নৌকা ফেরত দেব।’ দলীয় সভানেত্রীর কথায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আইভী।

নারায়ণগঞ্জবাসীর সেবায় কাজ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। এ সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই পাড়ের মানুষের সংযোগ তৈরিতে শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি সেতু তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আইভীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!