• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপিতে আশার আলো, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস


সোনালী বিশেষ নভেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৪:০০ পিএম
বিএনপিতে আশার আলো, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস

ঢাকা : দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি ডিঙিয়ে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত আর উচ্ছ্বাসের চিত্র নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে দলটিকে। কয়েকদিন আগেও বিএনপির কর্মসূচি ছিল বক্তব্য-বিবৃতি নির্ভর। তবে ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে।

সমাবেশে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া এসেছে দাবি করে দলটির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, এটি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের এক ধরনের প্রতিবাদ। ঢাকার সমাবেশে সফলতা আসার পর এবার বিএনপি ঘরের ভেতরের বক্তব্য-বিবৃতি ছেড়ে রাজপথে পা বাড়াচ্ছে।

ঢাকার সমাবেশের মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তাদের দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে আবারো সরব হওয়ার চেষ্টা করছে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য লক্ষণীয়। বিশেষ করে তার দেশে ফেরার দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এরইমধ্যে ১৮ মাস পর গত ১২ নভেম্বর বড় কোনো সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি সরকারের বিভন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা ছাড়াও নির্বাচনমুখী বক্তব্য দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে মানুষের যে উপস্থিতি ঘটেছে, এটি সময়ের দাবি। জনগণের এই সমাগম সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ। তারা অনেকদিন পর সুযোগ পেয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এজন্য শত বাধা স্বত্বেও মানুষের স্রোত ঠেকানো যায়নি। ঠিকই জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে সমাবেশ। তিনি বলেন, মানুষ ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে তাদের ক্ষোভের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে ভোটেও। কারণ, সরকার গত কয়েক বছরে যে অনৈতিক কাজগুলো করেছে মানুষ তার রায় দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটি জনগণের- মন্তব্য করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক আরো বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এই দাবিটি বিএনপির একার নয়। বরং এটি আওয়ামী লীগ, জামায়াত এবং এরশাদেরও দাবি। তৎকালীন সময়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই সংবিধানে না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তা জাতীয় সংসদে পাশ করেছিলেন। সেই দাবিটিই আমরা করছি। আর আমাদের দাবির প্রতি জনগণের যে স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন আছে, তা কয়েকটি কর্মসূচির গনজমায়েতে প্রমাণ হয়েছে।


 

একই প্রসঙ্গে বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিশাল গণসমাবেশের’ মাধ্যমে মানুষ সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি আর লুটপাটের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন দেশে আইনের শাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আর বিচারবিভাগ নিয়ে সরকার সর্বশেষ যে নজির স্থাপন করেছে। সে ব্যাপারেও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছে মানুষ। যার প্রমাণ বিএনপির সমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত যোগদান।

বিএনপির সমাবেশে প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে দুদু আরো বলেন, সরকার যদি জনগণের মনের ভাব বোঝে। তাহলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর যদি তারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে জনগণও সেটার জবাব দিতে জানে।

এছাড়া বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতারা জানান, দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থানের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন দেশে ফিরেছেন, তখন থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব তৈরি হয়েছে। এর রেশ কক্সবাজার সফর এবং সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশে পড়েছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে রাজধানী ঢাকার বাইরে বিএনপি নেত্রীর একাধিক সফরের কথা ভাবছেন তারা। অন্তত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে একটি সমঝোতার আগ পর্যন্ত দলীয় প্রধানের এই ধরনের কর্মসূচি চলবে। এতে করে সারাদেশের নেতাকর্মীদের আন্দোলিত করবে বলে মনে করেন তারা।

দলীয় সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণাকে সামনে রেখে এসব সফর হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সড়কপথে সফর করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙা করাই এর মূল লক্ষ্য। চলতি মাসের শেষভাগে রংপুর অঞ্চল এবং ডিসেম্বরে সিলেট অঞ্চলে সফর করার চিন্তাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে সড়ক পথে বিএনপির চেয়ারপারসন সিলেট যেতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

এছাড়া দলটির নেতারা বলছেন, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দল ক্ষমতায় নেই। এক-এগারোর পর থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের শাসনামল পর্যন্ত হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে নাজুক অবস্থা নেতাকর্মীদের। এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কর্মসূচি সার্থক করতে তারা (নেতাকর্মী) যা করেছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!