• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
দলের ভেতরে-বাইরে কানাঘুষা

বিএনপিতে ভাঙনের শঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭, ১০:১৪ এএম
বিএনপিতে ভাঙনের শঙ্কা

ঢাকা : বর্তমানে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। একদিকে দুর্নীতির মামলায় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার শাস্তির আশঙ্কা। অন্যদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন বাতিলের উৎকণ্ঠা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আবারও দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে নিবন্ধন বাতিল হলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বিএনপি।

দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি যখন দল গুছিয়ে নির্বাচনমুখী, তখনই দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামালায় সাজার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর সাজা হলে জাতীয় নির্বাচনের বাইরে থাকতে হবে তাকে। এদিকে খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী পরপর দুইবার নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে নিবন্ধন বাতিলের সংকটে পড়তে পারে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে দলটির নেতারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রশ্নে কোনো আপস নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে চাপে ফেলে সরকার দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দলটির নেতারা  আশা দেখছেন যে আগামী জাতীয় নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে ও নিরপেক্ষ করতে সরকার আন্তরিক হবে।

দল ভাঙার ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে সরকার যদি কোনো ভুল করে। তাহলে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এর ফলে দেশজুড়ে যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে উঠবে তাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’ 

একই প্রসঙ্গে বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে যদি তাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। তাহলে ওই নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। তাতে করে যদি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়, এতে কোনো আপত্তি নেই তাদের।’ তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে না।

হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি জন্মের পর থেকে এমন কঠিন সময় পার করেনি। আর এমন পরিস্থিতিতে সরকার তো নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে বিএনপিকে ভাঙতে। তবে তাদের কাজ তারা (সরকার) করবে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য নিয়ে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন এবং থাকবেন।’

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে জেলে পাঠোনো হলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে যদি জেলে পাঠানো হয়, তাহলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ এ নির্বাচন মেনে নেবে না এবং দেশপ্রেমিক কোনো দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে না।”

এ ছাড়া বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নিতে চান। তবে সেই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হতে হবে। আর নির্বাচনের আগে এই ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন তারা।

এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের চাপে এবং লোভে পড়ে বিএনপির যেসব নেতা দলের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন, এমন একাধিক নেতার তালিকা তৈরি করছে বিএনপি হাইকমান্ড। জানা গেছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এই তালিকা প্রণয়নে সব রকম তদারকি করছেন। আর এই সিনিয়র নেতাকে সহযোগিতা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং একজন যুগ্ম মহাসচিব। সূত্রের দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে খুবই স্পর্শকাতর এই ইস্যুটি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজ করছেন। পাশাপাশি অতীত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতেও কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ ছাড়া ‘টাইম টু টাইম’ এই চারজন নেতা দলের সর্বশেষ সাংগঠনিক অবস্থা এবং সন্দেহজনক নেতাদের ব্যাপারে ‘বিশেষ নোট’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলের মতো আবারও দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন তারা। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে যে কানাঘুষা চলছে- এ বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি। তার দাবি, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কিছু দুর্বলচিত্তের নেতাকে বিভিন্নভাবে চাপে ফেলে সরকার দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করতে পারে। আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে থেকেই বিএনপি হাইকমান্ড সতর্কতা অবলম্বন করছেন।’ 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!