• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপিতে ভোটের তোড়জোড়


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৬, ২০১৬, ১০:৩৯ এএম
বিএনপিতে ভোটের তোড়জোড়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেই। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের এপ্রিলের মধ্যেই দেশে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে ফলাফল যা-ই হোক না কেন, দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় নতুন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে বিএনপি। দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ওই ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, দলের দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন যুগ্ম মহাসচিব, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন সহদফতর সম্পাদক এবং বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজের সঙ্গে ইতিমধ্যেই সম্পৃক্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, দলের অন্যতম একজন প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্যকে ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল। আগামীকালও যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি নেই বিএনপির। তবে সেটি নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচনের নামে তামাশা হলে চলবে না। অবশ্যই একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে হতে হবে জাতীয় নির্বাচন। যাতে দেশের সব রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছাড়া দেশের চলমান সংকট নিরসন সম্ভব নয় মন্তব্য করে দলের বর্তমান মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুদু সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি সংঘাত-হানাহানি চায় না, শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের চলমান সংকট কেটে যাবে।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক দল। এ ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক না কেন, সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি অবশ্যই বিএনপি নেবে। তবে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশে ভোটের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আর তা হলো একটি কার্যকর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, কার্যত দেশে একটি রাজনৈতিক সংকট চলছে, সেই সংকট সমাধানের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংকট সমাধানের প্রথম ধাপ হতে পারে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন। নতুন নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বচ্ছতার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা এটা গ্রহণ করব।   

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের জন্য দলের ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ঘরানার বেশ কয়েকজন পেশাজীবীর সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন সেক্টরে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করে এরই মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট জাতীয়তাবাদী একজন পেশাজীবী নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নির্বাচনে ইশতেহার কেমন হবে, তা দলের গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ‘ভিশন ২০৩০’-এর আলোকেই তৈরি হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার।

এদিকে বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত সরকারবিরোধী কঠোর কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না দলটি। ভেতরের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে নতুন জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। নির্বাচনে অংশ নিতে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিটি সংসদীয় আসনে কমপক্ষে দলের তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে হাইকমান্ডের নির্দেশে গোপন জরিপ। যার ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে আরেকটি সম্ভাব্য প্রার্থীতালিকা। সব শেষে দুই তালিকার সমন্বয়ে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন আর দলীয় প্রধানের প্রতি আনুগত্য রয়েছে- এমন যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়েই করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এসব তালিকা। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কমিটির ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদিও সংগ্রহ করার কাজ চলছে।

প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে গত মাসে সৌদি আরব সফরকালে বৈঠকে বিস্তারিত কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে তারেক রহমান আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সার্বিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে দলটি। মূলত ওই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। পাশাপাশি দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরছেন।

যদিও সরকারের মন্ত্রীরা বরাবরই বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না এবং সংবিধানও তা বলছে। তবে বিএনপি নেতৃত্ব মনে করছেন, নানা প্রেক্ষাপটে কয়েক মাসের মধ্যেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হতে পারে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!