• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ


ফেনী প্রতিনিধি আগস্ট ২৮, ২০১৭, ০১:৩৪ পিএম
বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ

ঢাকা : ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফেনীর তিনটি আসন ছিল বিএনপির। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ক’টি আসনই হাতছাড়া হয়ে যায়। সে থেকেই ফেনীতে দলটির রাজনৈতিক পতন শুরু।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে ফেনীর তিনটি সংসদীয় (২৬৭, ২৬৮, ২৬৯) আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত ফেনীতে এখন আওয়ামী লীগের আধিপত্য। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই নয়, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

তবে এ জেলা থেকে নির্বাচন করে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাই ফেনীকে ঘিরে বিএনপির উৎসাহ একটু বেশিই। তবে আওয়ামী লীগও এ জেলায় শক্ত ঘাঁটি করতে মরিয়া। এরইমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ধর্মীয়সহ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। বিশেষ করে বিগত রমজান ও ঈদুল ফিতর ঘিরে ছিল নানামুখী তৎপরতা। অনেকেই কোরবানি ঈদ ঘিরেও আগাম শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। ব্যানার, পোস্টারসহ নানাভাবে চলছে প্রচারণা।

সাম্প্রতিক সময়ে বন্যাকে ঘিরেও প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে উপদ্রুত এলাকায়। প্রধান দুই দলেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন, এ জেলায় কার্যত লড়াই হবে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের।

ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া): জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা জোরেশোরে শুরু করেছেন আগাম নির্বাচনী প্রচারণা। বিএনপির প্রধান দুর্গ হিসেবে খ্যাত ফেনী-১ আসন দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে বিএনপি।

অপরদিকে এ আসন নিজেদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এ আসন থেকে বরাবরই নির্বাচন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি প্রধানের পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা দিবসকে ঘিরে বেগম জিয়ার শুভেচ্ছাবার্তাও সাঁটানো হচ্ছে এলাকায়। কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে পরশুরাম পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবু তালেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অবশ্য নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা বেগম জিয়াই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

অন্যদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম আসবেন? দলের নেতাকর্মীদের এমন প্রস্তাব তাকে ঘিরে। জেলা আওয়ামী লীগ ফেনী-১ ও ২ আসনের যে কোনো একটিতে তাকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলেও গতবার তিনি সম্মত হননি।

২০১৪ সালে তিনি নির্বাচন করেননি। তবে এবার তিনি নির্বাচন না করলে কে প্রার্থী হবেন- তা নির্ভর করছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সমর্থনের ওপর। বর্তমানে এ আসনের এমপি জাসদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের নামও শোনা যাচ্ছে।

ফেনী ২ (সদর): এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এরইমধ্যে তিনি নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, একাদশেও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাবেন নিজাম হাজারী।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদিন হাজারী, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাহেদ রেজা শিমুলও মনোনয়ন চাইবেন। অপরদিকে, বিএনপি থেকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন (ভিপি) মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার ও জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী হাবিবউল্যাহ মানিকের নামও শোনা যাচ্ছে।

ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঞা): এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এ নিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। তবে বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা রোকেয়া প্রাচী ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। আর এজন্য নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানেও দেখা যাচ্ছে এই অভিনেত্রীকে। জানা গেছে, রোকেয়া প্রাচীকে ফেনী-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন ফেনী জেলা শ্রমিক লীগ।

এছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও  ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, এবং দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন। বর্তমান ‘স্বতন্ত্র’ সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি এ আসনে নির্বাচন করবেন- এমন তথ্য এলাকার নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। কারণ বিগত দিনে দলের দাবি আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন।

এছাড়া জিয়া পরিবারের সঙ্গে আবদুল লতিফ জনির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্তার সম্পর্ক রয়েছে। দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এরইমধ্যে তাকে ফেনী-৩ আসনে নির্বাচনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। তবে তিনি কোনো কারণে নির্বাচন না করলে প্রার্থী হতে পারেন- বিএনপি নেতা মাবরুল হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন, সোলেমান ভূঞা প্রমুখ।

এছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে মাঠে রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!