• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
খালেদার লন্ডন সফর

বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতি এখন লন্ডনমুখী


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ৫, ২০১৭, ০৩:৩৮ পিএম
বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতি এখন লন্ডনমুখী

ঢাকা : একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সেই ধীর যাত্রায় গতি আসবে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের পর। সহায়ক সরকারের দাবিতে সরব বিএনপির অনেক কিছুই এখন খালেদা-তারেকের সামনাসামনি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আটকে আছে।

কেমন হবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা, দাবি আদায়ে কবে নাগাদ রাজপথে নামবে, কারা পাবেন দলীয় মনোনয়ন, জাতীয় নির্বাচনে শরিক এবং অন্য দলের সঙ্গে বোঝাপড়াসহ নানা বিষয় এখন ঝুলে আছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের ওপর।

তবে এসব সিদ্ধান্ত খালেদার লন্ডন সফরের জন্য যে আটকে আছে, সে কথা সরাসরি মানতে নারাজ দলের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করেন, দল চলে দলীয় ফোরামের সিন্ধান্ত অনুযায়ী।

সবকিছুই হয় দলীয় ফোরামে আলোচনার ভিত্তিতে। তবে তারেক রহমান যেহেতু দলটির পরবর্তী শীর্ষ নেতা, তাই তার সঙ্গে শলাপরামর্শ হওয়া তো দোষের কিছু নয়।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে দলের একটি নীতিনির্ধারণী ফোরাম রয়েছে। সেই ফোরামে আলোচনা করেই হয় দলীয় সব সিদ্ধান্ত।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘শুধু বিএনপিই নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষ চায় আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই একটি রূপরেখা দেবেন।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি বা সামনের মাসের শুরুতে চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সফরটি আরো আগে হওয়ার কথা থাকলেও মামলা জঠিলতা এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেই পিছিয়ে পড়ে। চার মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া সেই সফর হচ্ছে চলতি মাসে। প্রায় দুই সপ্তাহ লন্ডনে অবস্থান করে নিজের চিকিৎসার কাজ শেষ করবেন খালেদা জিয়া।

আর লন্ডন সফরের পরই দেশে এসে দেবেন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। সেই রূপরেখা এবং নির্বাচনী শলাপরামর্শের পরই কার্যত আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি ভোটের মাঠে নামবেন তিনি।

সরকারি দল অনেক আগেই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী কাজে নেমে পড়লেও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন কিছুতেই নির্বাচনে যেতে আগ্রহী ছিলেন না বলে জানা যায়।

কিন্তু দেশের বর্তমান বাস্তবতা এবং বিএনপির মিত্রদের পরামর্শে গত রোজার মাসে মহানগর বিএনপির এক ইফতার মাহফিলে হঠাৎ করেই ধানের শীর্ষে ভোট চান তিনি। এর পরপরই নির্বাচনের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন দলটির নেতাকর্মীরা।

বেশ আগে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব উপস্থাপনের কথা বলে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সহায়ক সরকারের রূপরেখাও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানা গেছে।

খালেদার লন্ডন সফরে রূপরেখার কয়েকটি প্রস্তাবের মধ্যে কোন প্রস্তাবটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হবে, সে বিষয়ে মা-ছেলে শলাপরামর্শ হতে পারে। কিংবা বিকল্প প্রস্তাবের ব্যাপারেও কথা হতে পারে তাদের মধ্যে।

জানা যায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনাও রয়েছে বিএনপি জোটের। গত দুই দফা আন্দোলন ব্যর্থতার পর এবারে আন্দোলনের কৌশল এবং দিনক্ষণ নিয়ে কথা হতে পারে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে।

তা ছাড়া নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েও আলোচনা হতে পারে দুই নেতার মধ্যে।

সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে চিকিৎসার পাশাপাশি মা-ছেলের আলোচনায় দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়েও কথা হতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন তা নিয়ে যেমন কথা হবে, এর বাইরে জোটের শরিক এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে কিভাবে একটি আওয়ামী বিরোধী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায় সেটা নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা হতে পারে।

সেই আলোচনা থেকে বিএনপির অবস্থানও পরিষ্কার করা হবে বলে জানা যায়। এমনকি সারা দেশের ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও তৈরি করা হতে পারে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার দেখা-সাক্ষাতে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সরকার যদি চেয়ারপারসনের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে পরবর্তী করণীয় নিয়েও কথা বলবেন দলের দুই নীতিনির্ধারকরা।

তবে দলের সিনিয়র নেতাদের বড় অংশই বলছেন, রাজপথমুখী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিই দেওয়ার কথাও থাকবে আলোচনায়।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!