• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির নেতৃত্বে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা


দ্বীন ইসলাম আরিয়ান এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০৯:২৯ এএম
বিএনপির নেতৃত্বে  ছাত্রদলের সাবেক নেতারা

ঢাকা : বিএনপির শীর্ষ পদে গুরুত্ব বাড়ছে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। এতদিন বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে এলেও বর্তমানে মূল দল বিএনপির শীর্ষপদে গুরুত্ব বেড়েছে তাদের। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আগামীতেও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও মূল দলের কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা আ ন ম সাইফুল ইসলাম ও শেখ রবিউল আলম রবি। ছাত্রদলের বর্তমান ও পদবঞ্চিত অন্যান্য নেতারা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিএনপির প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। সর্বশেষ সংগঠনে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া ঢাকা মহানগর কমিটির (দক্ষিণ) দায়িত্বও তুলে দেয়া হয়েছে দলীয় ভ্যানগার্ডের সাবেক এক সভাপতির ওপর।

এ নিয়ে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতাদের ওপরই ভরসা রেখেছেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা আশা করছেন, জিয়াউর রহমানের হাতেগড়া ছাত্রদল, এই সংগঠন করে যারাই বিএনপিতে জায়গা পেয়েছে, তারা-ই দলটির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। এদিক থেকে আগামী দিনের আন্দোলন ও কর্মসূচিতে রাজনৈতিক সাফল্য অর্জনের পথ অনেক সহজ হবে বলে প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।

ইতিমধ্যে বিএনপির মূল দলে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অবস্থান অনেকটাই শক্ত। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কমিটিসহ নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন সংগঠনের সাবেক প্রভাবশালী নেতারা।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, বর্তমানে তিনি অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এবং দলের ভোকালে পরিণত হয়েছেন। ১৯৯৬-এর শেষের দিকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সভাপতি হয়ে ৯৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলেন। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবিবুন নবী খান সোহেল। পরে তিনিও সভাপতি হন, পদে ছিলেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। গত বছর বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন সোহেল। গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)-এর সভাপতির দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বর্তমানে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক হিসেবে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ১৯৯২ সালের ১৬ মে প্রথমবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সভাপতি হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বর্তমানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দফতরের দায়িত্বে আছেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন ফজলুল হক মিলন, তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। ছাত্রদল নেতা ও ডাকসু নেতা খায়রুল কবির খোকন যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে সক্রিয় আছেন।  

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী টেকসই ও আগামী দিনের জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনীতি বিস্তারের জন্য ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মূল দলে ভূমিকা রাখা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রদলের পর মূল দলে দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী দিনে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে জনগণের কাছে তুলে ধরাই হবে প্রধান কাজ। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যারা জীবনের শুরু থেকে বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদল করার মধ্য দিয়ে, তারা এখন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এটি বিএনপির রাজনীতির জন্য শুভ লক্ষণ।’

১৮ এপ্রিল রাতে কমিটি ঘোষণার পরদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আন্দোলনে ঢাকা মহানগর সফল হবে। কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটির বেশিরভাগ পদেই তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ সফল হবে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেক নেতারা বিএনপির হাল ধরে রাখলেই জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা, আন্দোলনে এবার ঢাকা নেতৃত্ব দেবে।’

ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সরদার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সোনালী ফসল বিভিন্ন সময়ের ছাত্রনেতা, যারা সময়ের পরিক্রমায় জাতীয়তাবাদী দলের কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিএনপি আজও জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে আছে।’

আলোচিত এই ছাত্র সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়কসহ সম্পাদক ডালিয়া রহমান মনে করেন, ‘ছাত্রদল করে মূল দলে ভূমিকা রাখার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। জাতীয় রাজনীতির জন্য ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাবিবুন নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগরের নেতৃত্বে আসায় ছাত্রদলের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান অতীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি গতকাল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সব ধরনের মানুষের সমন্বয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু নেতৃত্বের জায়গায় বিশেষ করে দেশ গঠনে তিনি দক্ষদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। দীর্ঘ সময় পর হলেও বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি, যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের স্থান হচ্ছে। এটি খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ ধারা অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে বিএনপি আরো বেশি শক্তিশালী হবে ইনশাল্লাহ।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম গতকাল বলেন, বিষয়টি সবার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে। সাবেক নেতারা যে অবস্থায় থাক না কেন সেখান থেকে যদি দলীয় কর্মকাণ্ড নিষ্ঠার সাথে পালন করে তবে তারাও ভালো পজিশনে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!