• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির পরিকল্পনা নিয়ে অন্ধকারে নেতাকর্মীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ১১:১১ এএম
বিএনপির পরিকল্পনা নিয়ে অন্ধকারে নেতাকর্মীরা

ঢাকা : রাজনীতির মাঠে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাওয়া বিএনপির নতুন বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালকে ঘিরে নেই তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা। বিগত বছরটিও পরিকল্পনাহীন ছিল এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির। অনেকটা চালক ছাড়াই চলমান বিএনপির সামনে কেমন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা নিয়েও অন্ধকারে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা নতুন বছরে দল গোছানোর কথা বললেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই তাদের কাছে। বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি এ বছরেও আদৌ হবে কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। নতুন নির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আর কত সময় লাগবে তাও জানা নেই কারো। পাশাপাশি গত বছরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তথা তৃণমূল পুনর্গঠনে ব্যর্থ বিএনপি নতুন বছরেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারবে কি না তা নিয়েও অন্ধকারে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

নতুন বছরের পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি নির্ভর করছে। তিনি (রাষ্ট্রপতি) নতুন ইসি গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে বিএনপি আন্দোলনে যাবে না। অন্যথায় পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাববে দলটি।

এদিকে গত বছরেই তৃণমূল পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের একাধিকবার ‘ডেডলাইন’ দিয়ে ব্যর্থ বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা এ বিষয়ে এখন অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছেন। তবে বর্তমান সরকারকে হঠাতে ভবিষ্যতে আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়েও বেশিরভাগ নেতার কাছেই নেই কোনো নির্দেশনা। অবস্থান পরিবর্তন করতে হলে, বর্তমান বাস্তবতায় কী করা উচিত, তা নিয়েও মাথাব্যথা নেই দলের বেশিরভাগ নীতিনির্ধারক নেতার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল সিনিয়র এক নেতা জানান, শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপি গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে যারা নিজেদের সংগঠনটাই গোছাতে পারেনি, তাদের পক্ষে কি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সম্ভব- এমন প্রশ্ন উল্টো ছুঁড়ে দেন এই নেতা। তার মতে, সুবিধাবাদী এমন কিছু নেতা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করেছেন, যার কারণে চাইলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সব নেতাকর্মীর ঘুম ভাঙাতে পারবেন না। তিনি আরো জানান, বর্তমান বাস্তবতায় তা অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কেউ সুযোগ করে না দিলে ক্ষমতায় আসার দুয়ার খোলাটা কতটা কষ্টসাধ্য হবে, এটা দলের হাইকমান্ডও জানে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ মনে করেন, সামনে যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, বিএনপিকে নির্বাচনের পথে থাকতে হবে। এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি বিএনপি। এই দুটো দলের একটি নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকলে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ জন্য বর্তমান সরকারকেও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চার মাস ১৬ দিন পর ৫৯২ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় বিএনপি। তবে স্থায়ী কমিটিতে দুটি পদ, দলের কেন্দ্রীয় ছাত্র, সহ-ছাত্র ও যুব-বিষয়ক ও দফতর সম্পাদকের পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। কবে নাগাদ এসব পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। ঘোষিত নতুন কমিটিতে ১৭ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য, ৭৩ জনকে উপদেষ্টা, ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক ও সহ সম্পাদক মিলে ১৭৪ জন এবং নির্বাহী সদস্য রাখা হয়েছে ২৯৩ জনকে। এসব সদস্যের মধ্যে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ১১৩ জনকে।

এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল ও ওলামা দলসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব সংগঠনেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!