• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া দেবে না আওয়ামী লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০১৭, ০২:৪৭ পিএম
বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া দেবে না আওয়ামী লীগ

ঢাকা : বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের মধ্যে থেকে করার বিষয়ে নিজেদের অবস্থানে ‘অনড়’ থাকবে দলটি। বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না চান, তাহলে দলটির বড় একটি অংশ বিদ্রোহ করে বিএনপি নাম দিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান।

তাদের মতে, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো প্রস্তাব থাকলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তারা আলোচনা করতে পারে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার কোন কারণ ও প্রয়োজন নেই। বিএনপির সংবিধানবহির্ভূত নির্বাচনকালীন প্রস্তাব নিয়ে সরকারেরও কোন আগ্রহ নেই।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন। বিএনপির নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী ১০ মে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরে আলোচনার প্রস্তাব দিতে পারেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি এবারও যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট ও বিএনপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের কিছুটা ছাড় দেয়ার পরিকল্পনাও রাখছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সংবিধানের মধ্যে থেকেই সবকিছু করতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদের দেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপির আসন্ন প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি যে প্রস্তাবের কথা বলছে, এটা কি সংবিধানের মধ্যে আছে? এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার কী আছে? নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির কোনো কথা, কোনো পরামর্শ থাকলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সেটা দিতে পারে। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে আসবে- এমনটা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের আগে সুবিধাজনক অবস্থা ও দরকষাকষি করতে বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়ে রাজনৈতিক কৌশল নিচ্ছে। তবে এ প্রস্তাবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না তারা। দলটির নেতাদের যুক্তি, সংবিধানের মধ্যে এ ধরনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিএনপির এ দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে পারবে না। এক্ষেত্রে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালালে দেশ-বিদেশে বিএনপির রাজনীতি আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা বরৈন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এরই মধ্যে দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই তাদের পক্ষে অতীতের ভুল পথে হাঁটা হবে আত্মঘাতী।

বিএনপির ভিশন-২০৩০ জনগণ গ্রহন করবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, এটা আওয়ামী লীগেরই ভিশন-২০২১ এবং উন্নত দেশ গড়ার ভিশন-২০৪১ এর পরিপূরক। এখানে নতুনত্ব বলে কিছু নেই। কোনো চমক থাকার সুযোগ নেই। ফলে মানুষ গ্রহন করবে না।  মানুষ সহজেই বুঝবে আওয়ামী লীগের আইডিয়া থেকেই তারা এটা কপি করেছে। এরপরও বিএনপি যদি বর্তমান সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে আসে, তাহলে জোটগতভাবে ভোটের লড়াইয়ে নামবে তারা। আর সহায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকলে খালেদা-তারেক রহমানের বাইরে বিএনপির একটি বড় গোষ্ঠীকে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে যাবে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা মনে করছেন, সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপি অনড় থাকলে রাজনীতিতে তাদের মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে না। তাছাড়া বিএনপির যেসব নেতা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে, তাদেরও বুঝিয়ে নির্বাচনে আনাটা সরকারের জন্য সহজ হবে। সেক্ষেত্রে ৫০টি আসন দলটিকে ছেড়ে দিতে পারে সরকার। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন ও এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশি-বিদেশি চাপও খুব সহজে সামলে নিতে পারবে সরকার। একই সঙ্গে সবার অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সবকিছুর বিকল্প ভেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিষয়গুলো আঁচ করতে পেরেই বিএনপি সংস্কারপন্থীদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দলের সংস্কারপন্থী কয়েক নেতাকে নিয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকও করেছেন। মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। সংস্কারপন্থী ও পদবঞ্চিতদের অনেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এটা তারা বুঝতে পেরেছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এমপি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবির মাধ্যমে মানসিক চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু সংবিধান পরিপন্থী পন্থা হওয়ায় তারা এতে সুবিধা করতে পারবে না। তাদের আসল উদ্দেশ্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক ইচ্ছা পূরণ হবে না। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। খালেদা জিয়া যদি তার দাবিতে অনড় থাকেন, তাহলে বিএনপির একটি বড় অংশ বিদ্রোহ করে বিএনপি নাম দিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!