• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির মূল শক্তি এখন ‘তর্জন-গর্জন’


নিয়ন মতিয়ুল নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ১০:৫৩ পিএম
বিএনপির মূল শক্তি এখন ‘তর্জন-গর্জন’

ঢাকা: গত এক দশকের আন্দোলনে শক্তিক্ষয় করেও সরকার পতন না ঘটায় ঝিমিয়ে পড়েছেন রাজপথের লড়াকু অনেক নেতা। কূটকৌশলী নেতারাও দফায় দফায় ব্যর্থ হয়েছেন নির্বাচনী ফরমুলায়। দলের জনপ্রিয়তাকে নগ্নভাবে কাজে লাগাতে গিয়ে উল্টো ফল পেয়েছেন নেতারা। এসব কারণে গত এক দশক ধরেই ক্ষমতার বাইরে থাকতে হচ্ছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও বৃহৎ দল বিএনপিকে।

আন্দোলনের কৌশল প্রয়োগে ব্যর্থতা আর সরকারবিরোধী ইস্যুকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষোভ বেড়েছে তৃণমূলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, নিজের ঘাড়ে অন্যের বন্দুক রেখে গুলি করতে দেয়ার আত্মঘাতী প্রবণতা। এসব কারণে ক্ষমতার অংশগ্রহণ থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে জনপ্রিয় দলটিকে। ফলশ্রুতিতে সরকারের প্রবল প্রতিরোধের মুখে বিপর্যস্তকর অবস্থায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দলীয় কাঠোমো।

সর্বশেষ ৭ নভেম্বর (জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস) উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশের মাধ্যমে ব্যাপক শোডাউন করার পরিকল্পনা করে দলটি। কিন্তু সরকারের প্রতিরোধ ও কঠিন শর্তের বেড়াজালে তা আগের অনেক পরিকল্পনার মতোই মাঠে মারা গেছে।

মাঠ ও রাজপথের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো নিয়ে বহুবিধ প্রস্তাবনা ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন নেতারা। এর সঙ্গে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে সরকারকে আলোচনার টেবিলে আসার জন্য হাঁকডাক দিয়েই যাচ্ছিলেন বিএনপি নেতারা। তবে সরকার বার বারই তাদের আহ্বান উপেক্ষা করে গেলেও নেতারা তাদের ফরমুলা পরিবর্তন করার কোনো আগ্রহ দেখাননি।

সর্বশেষ গেল ১১ নভেম্বর হঠাৎ করেই ইসি পুনর্গঠনে বিএনপির দিকনির্দেশনামূলক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরলেন দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রস্তাবিত ফরমুলায় ইসি ও এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করার দাবি তুলে নজরুল ইসলাম খান বললেন, নির্বাচনকালীন সরকারকেও হতে হবে নিরপেক্ষ। তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আর এটা কীভাবে সম্ভব, কোন প্রক্রিয়ায় করা যাবে - সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরবেন আমাদের নেত্রী। দলের পক্ষ থেকে ২০ দলের নেতারা মিলে প্রস্তাবটি দেবেন।’

ফরমুলার মূল পয়েন্ট নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য একতরফা ভাবে বললেন, ‘আমাদের পছন্দনীয় লোকও দরকার নেই। অন্য কারও পছন্দনীয় লোকেরও দরকার নেই। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, যোগ্য, সৎ, নির্লোভ, সাহসী- যাদের মেরুদণ্ড সোজা, রকিবউদ্দীনের মতো নয় এবং যারা সংবিধান ও প্রচলিত আইন ছাড়া আর কারো কাছে নতি স্বীকার করবেন না, আর কারো কোনো হুকুম মানবেন না- এ ধরনের কিছু লোক দিয়ে ইসি পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে সেই ইসির অধীনে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবে। সঠিক রায় আসার সম্ভাবনা আছে।’

সুর একই রেখে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বললেন, ‘ইসি বলেন কিংবা নির্বাচন বলেন- মূল কথা হচ্ছে দেশের জনগণের ভোট নিশ্চিত করা। প্রত্যেকটি নাগরিক তার ভোট নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দিতে পারবেন তা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রস্তাবনায় থাকবে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠনের এই ফরমুলা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন। যে ফরমুলায় ইসি পুনর্গঠনের রূপরেখাও থাকবে। যে রূপরেখা ইতোমধ্যে নীতিনির্ধারক ও সিনিয়র নেতারা চূড়ান্ত করেও ফেলেছেন। একই সঙ্গে ইসি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনাও দেবে ২০ দলীয় জোট। যে কমিটি গঠিত হবে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক ও সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে।

শুধু ইসি বা সার্চ কমিটি গঠনই নয়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্যও আলাদা ফরমুলা তৈরি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সে ফরমুলায় বিশিষ্ট নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাবনা থাকছে।

তবে এতোসব ফরমুল, দাবি, রূপরেখা সরকার মেনে নেবে কিনা, না মানলে কী কর্মসূচি নেয়া হবে- এসব ব্যাপারে কোনোকিছুই চূড়ান্ত করা হয়নি। সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার মতো শক্তি বা সামর্থ না থাকার পরেও এসব ফরমুল কেন তৈরি করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয় অনেকেরই।

মূলত, ২০০৮ সালের পর দলের পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও ঘরোয়া সভা-সেমিনারের মধ্যেই আটকে থেকেছে সেসব ঘোষণা পরিকল্পনা।

এর মধ্যে কমাস আগে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলেও চেয়ারপারসন ও সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে নতুন করে আন্দোলনের জন্য মাঠে নামার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে কয়েক মাসে তার কোনো লক্ষ্মণ চোখে পড়েনি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের কথা, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা আসলে কাজের কাজ কিছুই করতে পারছেন না, তারা মূলত তর্জন-গর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন।’

বিএনপির পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অন্যতম একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমরা মুখে যতই বলছি আন্দোলন করব, কিন্তু এই মুহূর্তে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার মতো কোনো পরিকল্পনা বিএনপির নেই।’

কারণ হিসেবে ওই নেতা ব্যাখ্যা করেন, সর্বশেষ দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর পদায়নের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অসঙ্গতি থাকায় দলেন অন্তত ৫০ কেন্দ্রীয় নেতা স্বেচ্ছায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। এর ওপর অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোও হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে তৃণমূল নেতারা মূল দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে গোছানোর কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই আন্দোলন জমানো যাবে না।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!