• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির সামনে দু’টি চ্যালেঞ্জ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ১০:০৪ এএম
বিএনপির সামনে দু’টি চ্যালেঞ্জ

ঢাকা : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বর্তমানে বড় দু’টি চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয়েছে। প্রথমটি হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানোর ভয়। আর দ্বিতীয়টি আগামীতে নতুন করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের রাজনীতির মাঠে নামা।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনা যায়, সে চেষ্টা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নিবন্ধন বাতিলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

এদিকে সর্বশেষ নানা জলপনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি। নবগঠিত এই কমিটি নিয়ে ইতিমধ্যে ঢাকার নেতাদের মাঝে শুরু হয়েছে পাওয়া না পাওয়ার নানা সমীকরণ। সোনালীনিউজ-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংগঠন গোছানো এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এর আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট, অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব এবং নবগঠিত কমিটি নিয়ে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর হতাশার কারণে শেষ পর্যন্ত এই কমিটি কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা করছেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি সামনের দিনে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই কমিটি করা হয়েছে। এদের আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আছে। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, সামনের দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে হলে ঢাকায় তা জোরদার করতে হবে। এ চিন্তা থেকে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর বিএনপি ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিতে যাবে।

অন্যদিকে এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর ওপর মাত্রা ছাড়িয়েছে সরকারের দমন-পীড়ন আর হামলা-মামলার ঘটনা। এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে দলের জাতীয় সম্মেলন। তবে কমিটি পুনর্গঠনের অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। বহুবিধ বিরোধ আর দ্বন্দ্বের অবসান করা সম্ভব হয়নি মহানগর, বিভাগসহ অনেক জেলা, উপজেলা কমিটিতে। দলের এই পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। তার আগে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার দাবির আন্দোলনের পরিকল্পনাও করছে দলটি। সবমিলে সরকারের বাধা-বিপত্তি, নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর প্রতিকূলতা ছাপিয়ে বিভিন্ন সময়ে করা ভুলভ্রান্তিকে আমলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ যে কোনো নির্বাচনে দলের জনপ্রিয়তাকে প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর দলের নীতিনির্ধারকেরা।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করে বিএনপি। উত্তরের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ূমকে। বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার আসামি কাইয়ূম দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। দলটির নেতারা মনে করেন, শিগগির তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও আসা যাওয়ার মধ্যে বা আত্মগোপনে থাকেন। এ অবস্থায় উত্তরে নতুন কমিটি করা বা আন্দোলন চাঙা করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ূম বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা দিক নির্দেশনা দেয়া কঠিন কিছু নয়। তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন সফল করা।

প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ১৯৯৬ সালে খোকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৪ মে তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন ওঠে। কারণ ঢাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। খোদ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ঢাকা কমিটিকে ব্যর্থ বলেছিলেন।

এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মহানগরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ওই বছরের ১৮ জুলাই খোকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচিতেও ওই কমিটিকে দেখা যায়নি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতেও খোকা এবং আব্বাসের সমর্থকদের প্রাধান্য আছে। তবে খোকার অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা তুলনামূলক বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারীরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। খোকা-আব্বাসের অনুসারীদের অবস্থান কেমন হয়, তা-ও নতুন দুই কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় দুই দশক ধরে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওয়ার্ড বা থানায় নতুন কমিটি না হওয়ায় জট লেগে আছে।

জানতে চাইলে হাবিব উন নবী খান সোহেল এ প্রসঙ্গে বলেন, তাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালী করা। গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন-এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে রাজপথে আন্দোলন তৈরি করা এবং ভোটারবিহীন কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তারা সফল হবেন বলে আশা করেন।

ঢাকা মহানগর বিএনপিতে ক্ষোভ ও হতাশা: নতুন কমিটিতে জায়গা না পেয়ে বা প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কমিশনার কমিটিতে পদ পাননি। এটি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ আছে। তবে এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তাই তাঁরা এখনো আশাবাদী। আবার কেউ কেউ পদ পেয়েও খুশি নন। নবীউল্লাহ নবী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। কমিটিতে তাকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি তার অনুসারী অনেকেও হতাশ হয়েছেন। নবী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করছেন।

জানতে চাইলে নবীউল্লাহ নবী এ প্রতিবেদককে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য নতুন কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। তবে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে দু-এক দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।

নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার বিষয়ে হাবিব উন নবী বলেন, নতুন কমিটি হলে কিছু সমস্যা থাকে। সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে। আর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ূম বলেন, তিনি সেভাবে কোন ক্ষোভ হতাশা দেখছেন না। নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।

বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করুন: গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এম ইলিয়াস আলীসহ দলের নেতাকর্মীদের গুমখুনের প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হবে না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। তবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেখানে একজন সহায়ক সরকার থাকবে একই সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে। অন্যথায় এদেশে কোনও নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবেলা করতে পারছে না। তাই মিথ্যা মামলা-হামলা করে বিএনপিকে ঠেকিয়ে রাখছে। আওয়ামী লীগ জানে যদি তারা বিএনপির নেতাদের নামে মামলা না দেয়, তবে তারা শান্তিতে দেশ চালাতে পারবে না।

এছাড়া বিএনপির ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটির উদ্দেশে বলেন, আপনারা রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ হোন। রাজনৈতিক পরিধি আরও বাড়ান। ঢাকা মহানগরের প্রতি মহল্লায় মহল্লায় বিএনপির কমিটি গঠন করে দুর্গ ঘরে তুলুন।  যাতে করে ভবিষ্যতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ও একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!