• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বিকল্প জোট’ সৃষ্টিতে সরকারের সবুজ সংকেত!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ৭, ২০১৭, ০২:১২ পিএম
‘বিকল্প জোট’ সৃষ্টিতে সরকারের সবুজ সংকেত!

ঢাকা : দেশের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে বিকল্প একটি কার্যকর জোট গঠনের তোড়জোড় চলছে। শোনা যাচ্ছে, এ জোট গঠনের নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ‘হাত’ রয়েছে!

সরকারের পক্ষ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পরই জোট গঠনে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি জোটের বাইরে থাকা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে টার্গেট করেই এ তৎপরতা চলছে।

কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কোনো কোনো শরিক দলকেও সেই জোটে ঠেলে দেয়া হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে জাতীয় পার্টিকেই সেই জোটের নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন খুবই জটিল, কঠিন ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে। কারণ চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের নির্বাচনে বিএনপি জোট আসবে বলে তাদের বিশ্বাস।

এছাড়া বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছায় ভোট বর্জন না করলে তাদের ভোট থেকে বিরত রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচনের আগে এবং পরের হিসাব-নিকাশও পাল্টে যেতে পারে।

দীর্ঘ দুই মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকারের জেল-জুলুম ও রোষানলের শিকার বিএনপির বিজয়কে কোনোভাবেই সরকার নিরাপদ মনে করছে না। সে জন্য রাজনীতির মাঠে বিএনপি-জোটের বিকল্প একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফর্মের প্রয়োজন বেশ অনুভব করছে সরকার।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৩ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় চা চক্রে অংশ নেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এর মধ্যে বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীসহ বেশ কিছু রাজনীতিক সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

পুলিশ চা চক্রের ওই অনুষ্ঠানে বাধা দিতে চাইলে তা রাজনীতিতে আলোচনায় আসে। তবে আ স ম রবের বাসায় পুলিশি বাধাদানের বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক কৌশল বলে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে।

সর্বশেষ গত বুধবার (২ আগস্ট) রাতে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় আরেক দফা বৈঠকে বসেন তৃতীয় ধারার এই রাজনীতিকেরা। ওই বৈঠকে মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও সরকার ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের অংশ নেন। ফলে আবারো রাজনীতিতে আলোচনায় আসে তৃতীয় জোট গঠনের বিষয়টি।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছাড়া বিকল্প কিছু দেখছেন না তারা। নানা উন্নয়ন কর্মকা-, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় বাস্তবায়ন এবং আন্দোলনের মাঠে বিএনপির নিষ্ক্রিয়তায় দেশের আপামর জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে বলে তাদের বিশ্বাস।

তবে কোনো কারণে নির্বাচনে এর উল্টো কিছু ঘটলে তা আওয়ামী লীগের জন্য বেশ বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তাই নির্বাচনের ফলে অনাকাক্সিক্ষত কিছু এড়াতে বিকল্প কিছু নিয়েও চিন্তা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।

এ ক্ষেত্রে বিএনপি জোটের বিকল্প শক্তিশালী ও কার্যকর কোনো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তিকেই পছন্দ তাদের। আর বিকল্পধারা, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি ও নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দলের রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া সেই তৃতীয় শক্তির অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, শক্তিশালী তৃতীয় এই জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা দিতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তারই অংশ হিসেবে সম্ভাব্য সেই জোটে নতুন করে মহাজোট ও সরকারের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জাসদের একটি অংশ এবং আরো কয়েকটি দলকেও সেই জোটে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হতে পারে।

আর সব ঠিক থাকলে সরকারের পরামর্শে জাতীয় পার্টি সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে সরকারবিরোধী ভূমিকায় মাঠে নামতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিএনপির বিকল্প একটি বড় রাজনৈতিক জোট গঠন সম্ভব হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফলে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় এলে সেখানে বিরোধী দল হিসেবে থাকবে জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন জোটই। আবার কোনো কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গেলেও বিএনপির বিকল্প হিসেবে এই জোটকেই নিরাপদ মনে হচ্ছে তাদের। আর এবার বিরোধী দলেও জায়গা না হলে একপর্যায়ে বিএনপি আরো দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন।

দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে বি. চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আবদুর রবসহ অনেকের সাথে যোগাযোগ করে সমঝোতার চেষ্টা রয়েছে সরকারের। আর জাতীয় পার্টিকে দিয়েই তার পূর্ণতা দেখতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।

এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই দুই শক্তির প্রতিপক্ষে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটা রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা। একা একা পারছিনা তাই জোটগত ভাবে চেষ্টা করছি।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!