• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার চলাকালে ভাঙচুর: ১৫ আইনজীবীর কারাদণ্ড


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মার্চ ২১, ২০১৭, ০৮:৩৩ পিএম
বিচার চলাকালে ভাঙচুর: ১৫ আইনজীবীর কারাদণ্ড

সাতক্ষীরা: বিচার কার্যক্রম চলাকালিন সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের দরজা ও জানালা ভাঙচুরের অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলমসহ ১৫ আইনজীবীর প্রত্যেককে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) জেলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. হাবিবুল্লাহ মাহমুদ এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে এক ঘণ্টা পর আপিল আবেদন জানালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জোয়ার্দ্দার মো. আমিনুল ইসলাম আপিল শুনানির আগ পর্যন্ত তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা বণ্ডে অন্তবর্তীকালিন জামিন মঞ্জুর করেন।

দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আইনজীবীরা হলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পদক অ্যাড. আব্দুস সাত্তার, অ্যাড.শেখ তোহা কামালউদ্দিন হীরা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজাম, অ্যাড. আকবর আলী, অ্যাড. অসীম কুমার মণ্ডল (রথখোলা), অ্যাড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলু, অ্যাড. মিজানুর রহমান বাপ্পি, অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, অ্যাড.আব্দুস সালাম, অ্যাড. সাইফুল ইসলাম, অ্যাড. মো. সোহরাব হোসেন, অ্যাড. আব্দুস সামাদ (৪), অ্যাড. আনিছুজ্জামান আনিছ, অ্যাড. সোহরাব হোসেন বাবলু।

বেকসুর খালাস পাওয়া আইনজীবীরা হলেন, অ্যাড. সরদার সাঈফ ও অ্যাড. সাহেদুজ্জামান সায়েদ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম চলাকালিন বিচারককে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি নিয়ে ঘরের দরজা ও জানালার কাঁচ ভেঙে পেশকার, পিওনসহ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন আসামিরা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ওই আদালতের বিচারক মো. ফখরুদ্দিন বাদি হয়ে ওই দিন ১৭ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ আইন ২০০০ এর সংশোধনী ২০১২ এর ৪ ও ৫ ধারায় সদর থানায় মামলা (দ্রুত বিচার -২৬/১৩)দায়ের করেন।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সাত্তার অন্য আইনজীবীদের পক্ষ নিয়ে জামিন প্রদানের জন্য ট্রাইব্যুনালের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন। নতি স্বীকার না করায় ট্রাইব্যুনালের উপর ওই দু’আইনজীবী নেতা ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ২২৫/১০ এর আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. তোহা কামালউদ্দিন হীরা পেশাগত অসদাচরন ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বরের ২৭নং আদেশটি  ৯৮ স্মারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের রেজিষ্টার বরাবর পাঠানো হয়।

এ ছাড়া বিশেষ পিপি’র কথার পরিপ্রেক্ষিতে নারী  শিশু ২২৫/১০ মামলাটির ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বরের ২৬ নং আদেশ অনুসারে অত্র ট্রাইব্যুনালের অফিস আদেশ পরদিন ২২৮০ নং স্মারকে ইসুকৃত নোটিশ জারি সংক্রান্ত বিষয় এ ট্রাইব্যুনালের এমএলএসএস সিরাজুল ইসলামের ৭ নভেম্বরের প্রতিবেদনের আলোকে আসামি অ্যাড. হীরা ও অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের ওকালাতনামায় স্বাক্ষর করে পেশাগত অসদাচরণ ও আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করার নিমিত্তে সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্টার বরাবর পাঠানো হয়।
২২৫/১০ মামলার ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বরের ২৮ নং বিচারিক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা শুরুর বিষয়টি অবহিত হলে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সাত্তারসহ ১০/১২জন আইনজীবী তাকে (মো. ফখরউদ্দিন) হত্যা বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এজলাস কক্ষে এ হামলা চালান ।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক এসএম হুমায়ুন কবীর ২৭ নভেম্বর অ্যাড. শাহ আলম, অ্যাড. আব্দুস সাত্তারসহ এজাহারভুক্ত ১৭ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ৩ আগষ্ট ওই ১৭ আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।  

২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর ওইসব মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ২২ নভেম্বর প্রথম, ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তৃতীয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চমবার, ২০ মার্চ ষষ্ঠবার ও ২১ মার্চ সপ্তমবারের জন্য রায় প্রদানের দিন ধার্য করেন সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ। সাতজন সাক্ষী ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক ওই রায় প্রদান করেন।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রায় ঘোষণার পর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা একই আদালতে জামিন আবেদন জানালে তা খারিজ করে দেন বিচারক।

একপর্যায়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে জামিন আবেদন জানালে বিচারক জোয়ার্দ্দার মো. আমিনুল ইসলাম প্রত্যেককে আপিল শুনানির আগ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা বণ্ডে অন্তবর্তীকালিন জামিন মঞ্জুর করেন।

সাতক্ষীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু ১৫ জন আইনজীবীর কারাদণ্ড ও পরে তাদের জজ কোর্ট থেকে জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এজাহারে উল্লেখিত একই ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ১৭জন সদস্যের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তদকালিন বিচারক মো. ফখরুদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা বার কাউন্সিলের ট্রাইব্যুনাল- ২ এ একটি মামলা চলমান রয়েছে।

তবে সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে সাতক্ষীরায় যোগদান করেন মো. ফখরুদ্দিন। কয়েক মাস না যেতেই ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী নারী ও আইনজীবীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে তাকে অপসারনের দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ওই আদালত বর্জন, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন কর্মসূচিসহ প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যহত থাকে।

সূত্রটি আরো জানায়, এজলাস চলাকালিন সময়ে কালীগঞ্জের দক্ষিণশ্রীপুরের এক প্রতিবন্ধি নারীকে ধর্ষণের পর গর্ভপাত করতে বাধ্য করানো সংক্রান্ত এক মামলায় তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালিন বাগেরহাট সদর থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক আজগার আলীর সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টি আন্দোলনরত আইনজীবীরা জানতে পেরে ওই ট্রাইব্যুনালের বারান্দায় বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক, আদালত পরিদর্শক রতন শেখসহ পুলিশের একটি টিম  এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!