বিচার বিভাগকে শূন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

ঢাকা: দেশ উন্নত হলেও মানের দিক থেকে দেশের বিচার বিভাগকে শূন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সু্প্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলাকে নির্বাহী বিভাগ রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করলেও এসব বিষয়ে আমি কথা বলেই যাবো। কোনোভাবেই ক্ষান্ত হবো না।

প্রধান বিচারপতি আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে বলছি, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভংগুর অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে। নতুন একটা এনেক্স ভবন না করলে মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী, বিচার বিভাগ কিভাবে চলবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, নারী বিচারকদের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকরা অগ্রগামী। আমি চেষ্টা করছি মহিলা বিচারপতিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য। সরকার এগিয়ে আসলেই হাইকোর্টে আরো মহিলা বিচারক নিয়োগ দেয়া সম্ভব।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমাদের দেশে মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মামলার অনুপাতে বিচারক নিয়োগ হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের মামলার তুলনায় আমাদের বিচারপতিদের সংখ্যা অর্ধেক।

আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আপিল বিভাগে আরো ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার জন্য। আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে পলিটিক্যাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামত বিচারপতি নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে।

এ সময় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাওয়ার আগে সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন শূন্য পদে বিচারক নিয়োগ এবং সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে মনযোগী হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এই পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি।’ নারী বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রিয় নারী বিচারকেরা মনে রাখবেন বিচারকের জীবন মানেই ন্যায় বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া। আর এই দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও দেশের নারী বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, মামলা বেড়ে যাচ্ছে। বিচারকদের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আমাদের বিচারপতিদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আপিল বিভাগেও বিচারপতি কম। আপিল বিভাগে তিনজন বিচারক নিয়োগ দেয়া জরুরি বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। বিচারক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মৌখিক আবেদন করেছি। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। বিভিন্ন জেলায় জেলায় জজ নেই। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নেই বলেও জানান তিনি। জাতীয় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৪০ জনের বেশি বিচারক একসাথে বসা যায় না। জায়গা সংকট। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ কম।

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নাসমুন আরা সুলতানাসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল হাইকোর্ট বিভাগ ও বিচারিক আদালতের বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর