• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সংকট চলছে’


আদালত প্রতিবেদক অক্টোবর ৮, ২০১৭, ০৬:৪২ পিএম
‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সংকট চলছে’

ঢাকা: সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে কি না, এ নিয়ে দেশে সংকট চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। 

রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মানববন্ধন কর্মসুচিতে এসব কথা বলেন তিনি।

মওদুদ আহমেদ বলেন, একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এ সংকট। রায় সরকারের পছন্দ হয়নি, এজন্য রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকার ও সরকারি দলের লোকেরা নজিরবিহীন আচরণ করছে।

তিনি বলেন, কোনো সভ্য দেশে, গণতান্ত্রিক দেশে কোনদিন শুনিনি প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করা হয়। এখনও প্রধান বিচারপতি সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছেন। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এটিই তার প্রমাণ।  

বিএনপি নেতা বলেন, আমাদের আইনজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সনিহার সাথে দেখা করতে পারেন না। তার আত্মীয়স্বজনরা দেখা করতে পারছেন না। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বলেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।

অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়েছেন এটি নিছক একটি দাবি। আমি তার কোনো অনুস্থতার লক্ষণ দেখছি না। কারণ প্রধান বিচারপতি লক্ষী পূজায় ও অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশন কার্যালয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি যে ছুটি নিয়েছেন, এতে নতুন করে প্রমাণ হলো এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অজুহাত ছিল।

বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনাদের বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উপরে হামলা এসেছে। এ হামলা নগ্ন হামলা এটা আওয়ামী হামলা।

তিনি বলেন, বন্ধের পূর্বে আওয়ামী আইনজীবীরা সরকারের তরফ থেকে বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি আপনি যদি রায় বাতিল না করেন বন্ধের পরে আপনাকে আর বসতে দেয়া হবে না। এরই প্রতিফলন হিসেবে আজকে জোর করে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অরও বলেন, প্রথমে বলেছিলেন তিনি অসুস্থ। আমরা বলেছিলাম তিনি সুস্থ। আমাদের কথাই পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে। কেননা তিনি অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন এবং পূজামন্ডপে গিয়েছেন। এখন শুনছি তাকে জোড় করে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এভাবে কামাল উদ্দিনকে বরখাস্ত করেছিল। আইনজীবীরা আন্দোলন করেছিল। আন্দোলন কখনও বৃথা যায়নি। আমাদের আন্দোলনও সফলতা আসবে।

এ সময় তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এ হামলা শুধু বিচার বিভাগের ওপর নয়, সিনহা বাবুর ওপর নয়, প্রধান বিচারপতির ওপর নয়। এ হামলা আপনাদের ওপরও। আজকে হয়তো ওপর থেকে হামলা শুরু হয়েছে। আপনাদের ওপরও হামলা শুরু হবে। আপনাদেরকে অনুরোধ করব আমাদের বার সমিতিকে বিভিন্নভাবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আপনাদের অনুরোধ করবো আপনরা একটু প্রধান বিচারপতির নিকট থেকে শুনে আসুন, কোন প্রেক্ষিতে তাকে এক মাসের ছুটিতে বাধ্য করা হয়েছে।

মাননীয় বিচারপতিগণ আপনাদের শুধু বিচারিক কাজ করাই দায়িত্ব নয়। আপনাদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার। আজকে বার সোচ্চার হয়েছে। বারের দাবি আপনাদের মানতে হবে। বার বেঞ্চ ঐক্যবদ্ধভাবে এ বিচার বিভাগের হামলার মোকাবেলা করি।

বিচারপতিদেরকে উদ্দেশ্য করে বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপনারা কি ভয় পান। ভয় পাইলে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করত পারবেন না। বিচারপতিরা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এমনকি আপনার সহকর্মীরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে ভয় পান। যারা ভয়ের মধ্যে আছে তাদের সুপ্রিমকোর্টে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা মাননীয় বিচারপতিরা যারা ভয় পান অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। যারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে ভয় পান আপনারা দয়া করে এই পদ ছেড়ে দেন। যাদের সাহস আছে তারাই সুপ্রিমকোর্টের দায়িত্ব পালন করবেন সংবিধান অনুযায়ী।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ আঘাত বিচার বিভাগের ওপর, সংবিধানের উপর, সুপ্রিমকোর্টের উপর। এটা প্রতিহত করতে হবে। এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। এখানে একনায়কতন্ত্র চায়, রাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সবই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গণভবন থেকে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটা সংবিধান বহির্ভুত। এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। ৭০ বছরের ইতিহাসে এত বড় আঘাত বিচার বিভাগে কখনো আসে নাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচারের জন্য হাইকোর্টে আসে। প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। আর সেই প্রধান বিচারপতিকেই অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় বিচার পাবে। এটা সরকারকে এবং বিশ্ব বিবেকের কাছে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!