• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিচ্ছেদের ভিড়ে তাঁরা ‍উদাহরণ


বিনোদন প্রতিবেদক অক্টোবর ৯, ২০১৭, ০৪:৫৪ পিএম
বিচ্ছেদের ভিড়ে তাঁরা ‍উদাহরণ

ঢাকা: শোবিজে বিচ্ছেদের খবর যতটা আলোচনায় আসে, মিলনের খবর ততটা নয়। তারকা দম্পতি তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি। এরপর গণমাধ্যমে এসেছে অভিনয়শিল্পী বাঁধন, শখ-নিলয়, হৃদয়-সুজানা, কণ্ঠশিল্পী মিলা আর সর্বশেষ নোভার বিচ্ছেদের কথা। কিছুদিন পরপরই কোনো না কোনো তারকার বিচ্ছেদের খবর পাওয়া যায়। সাধারণ দর্শকদের মতে, তারকাদের সংসার গড়া হয় ভাঙার জন্য। আসলেই তাই?

দিন শেষে একজন তারকাও অন্যদের মতো সাধারণ মানুষ। এমন অসংখ্য তারকা দম্পতি আছেন, যাঁরা যুগের পর যুগ একই ছাদের নিচে বাস করছেন। এমন সুখী দম্পতি শোবিজে কম নয়। একাল-সেকালের এমন অসংখ্য সুখী দম্পতির মধ্য থেকে কয়েকটি পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল প্রতিবেদনে।

Caption

জাহিদ হাসান-মৌ: বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানের সঙ্গে দুজন প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন। এরপর জাপানে একটি সাংস্কৃতিক সফরে গিয়ে মৌয়ের প্রতি প্রথম ভালোবাসা অনুভব করেন জাহিদ হাসান। তখন তিনি টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা আর মৌ জনপ্রিয় মডেল ও নৃত্যশিল্পী। ওই সময় পত্রিকায় তাঁদের নিয়ে প্রচুর গসিপ হয়েছে। পত্রিকার লেখালেখিই তাঁদের সম্পর্কের ভিত তৈরি করেছে। তাঁরা ভেবেছেন, সত্যিই তাঁদের মধ্যে একটা সম্পর্ক হলে কেমন হয়। মৌয়ের পরিবার শুরুতে রাজি ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৭ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। মেয়ে পুষ্পিতা ও ছেলে পূর্ণকে নিয়ে তাঁদের এখন সুখের সংসার। এখনো নিজ নিজ ক্ষেত্রে দারুণ জনপ্রিয় তাঁরা।

ফেরদৌসী মজুমদার–রামেন্দু মজুমদার: বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ১৯৬১ সালে একই সঙ্গে দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ফেরদৌসী বাংলায়, রামেন্দু ইংরেজিতে। সাবসিডিয়ারি ছিল সমাজবিজ্ঞান। সেখানেই তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎ হতো। কিন্তু তৎকালীন সময়ে ধর্মের বেড়াজাল পেরিয়ে একে অন্যের গলায় মালা পরানো সহজ ছিল না। শত বাধা ডিঙিয়ে ১৯৭০ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। প্রায় চার যুগ পেরিয়ে এখনো দুজন সুখে-দুঃখে পরস্পরের পাশে আছেন।

সৈয়দ হাসান ইমাম-লায়লা হাসান: সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান ১৯৬৫ সালের ৩০ জুন ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাঁদেরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব বলা যায়। বাংলাদেশের সফল ও আদর্শ দম্পতিদের তালিকায় তাঁদের নাম প্রথম দিকেই থাকবে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের সফল পিতা-মাতা সদা হাসিখুশি এই তারকা দম্পতি ইতিমধ্যে বিবাহিত জীবনের হাফ সেঞ্চুরি পার করেছেন।

রফিকুল আলম-আবিদা সুলতানা: রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানার প্রথম দেখা হয় বাংলাদেশ বেতারে। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি সংগীত সম্মেলনে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেন শিল্পী লাকী আখান্দ্‌। গানের জগতে একসঙ্গে পথ চলতে চলতেই তাঁরা একে অন্যের কাছাকাছি আসেন। ১৯৭৪ সালে তাঁদের প্রেমের সূচনা, ১৯৭৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একই ছাদের নিচে বাস করে দেশের সংগীত পিপাসুদের গান শুনিয়ে মুগ্ধ করে যাচ্ছেন।

আলী যাকের-সারা যাকের: চার দশকের দাম্পত্য জীবন তাঁদের। নাটকের দল নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের মাধ্যমে দুজনের পরিচয়। নাগরিকের প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী সময় থেকেই আলী যাকের জড়িত। ১৯৭৩ সালে যোগ দেন সারা যাকের। একসঙ্গে থিয়েটার করার সূত্র ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের কাছে আসা। মনের অজান্তে দিনে দিনে বন্ধুত্ব থেকে একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন। ১৯৭৭ সালে সুখের নীড় রচনা করে এখনো স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছেন তাঁরা। তাঁদের দুই সন্তান ইরেশ যাকের ও শ্রিয়া সর্বজয়া। তাঁরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে পথ চলছেন।

ম হামিদ-ফাল্গুনী হামিদ: ম হামিদ ও ফাল্গুনী হামিদের প্রথম দেখা হয় সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’ পত্রিকা অফিসে। ফাল্গুনী হামিদ ১৯৭৮ সালে ম হামিদ প্রতিষ্ঠিত নাটকের দল ‘নাট্যচক্র’র সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এভাবেই একে অপরের কাছে আসা, মন বিনিময়। ১৯৭৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে তাঁরা ভালোবেসে মালাবদল করেন। ১৯৭৯ সালের ১২ মার্চ সেই বিয়ে পারিবারিক স্বীকৃতি পায়। দুজন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় সম্পর্কের স্বীকৃতি পেতে তাঁদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। ম হামিদকে প্রথম দেখেই ফাল্গুনী হামিদের মনে হয়েছিল, একটা মানুষ এত সুদর্শন হয় কী করে! পরস্পরের প্রতি এমন মুগ্ধতা এখনো সমান অটুট। ম হামিদ ও ফাল্গুনী হামিদের দুই সন্তান—ছেলে প্রান্তর হামিদ ও মেয়ে অভিনেত্রী তনিমা হামিদ।

নাঈম-শাবনাজ: ১৯৯১ সালে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে নাঈম-শাবনাজ জুটির অভিষেক হয়। কয়েক বছরের অভিনয় জীবনে ২০টি ছবিতে কাজ করেছেন তাঁরা। নাঈম-শাবনাজ অভিনীত অধিকাংশ ছবিই ছিল ব্যবসাসফল। একসঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে গিয়েই তাঁদের ঘনিষ্ঠতা। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ের পর চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান তাঁরা। এখনো বিনোদন জগতের সফল জুটির কথা বললে তাঁদের নাম প্রথম দিকেই আসে। দাম্পত্য জীবনে সুখী এই জুটির এখন সময় কাটে দুই মেয়ে, সংসার আর ব্যবসা নিয়ে।

ওমর সানী-মৌসুমী: তারকা জগতের জনপ্রিয় দম্পতি ওমর সানী ও মৌসুমী। ১৯৯৫ সালে অনেকটা চুপিসারেই বিয়ে করেন। ছেলে ফারদিন গর্ভে আসার পর বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করেন তারা। তৎকালীন শেরাটন হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণভাবে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এ বছর তাঁদের বিয়ের ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুখে সংসার করছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ তারকা জুটি। তাঁদের প্রথম কাছাকাছি আসা ‘দোলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। ছেলে ফারদিন ও মেয়ে ফাইজাকে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। আজও দর্শকের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এই জুটি।

তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত: বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ এক জুটির নাম তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। তৌকীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিপাশা আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁদের প্রথম পরিচয় হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। একসঙ্গে নাটক করতে গিয়ে তাঁদের ভালোবাসার শুরু। দুজন একসঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯২ সালে ‘সোনালী রোদ্দুর’ নামের একটি নাটকে। ১৯৯৯ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। বর্তমানে তৌকীর আহমেদ অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করছেন। বিপাশা অভিনয় থেকে দূরে সরে গিয়ে ছবি আঁকা আর লেখালেখিতে ব্যস্ত আছেন। মেয়ে আরিশা ও ছেলে আরীবকে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। ভালোবাসার ভেলায় ভেসে পার করে দিলেন প্রায় দেড় যুগ।

মোশাররফ করিম-রোবেনা রেজা জুঁই: গত দশকের শুরুর দিকে সেগুনবাগিচায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন মোশাররফ করিম। তখন তিনি এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না। একই কোচিংয়ে পড়তেন জুঁই। তখন থেকেই জুঁইকে পছন্দ করতেন, কিন্তু বলতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে জুঁইও সেই কোচিংয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মোশাররফ করিম তাঁর মনের কথা জুঁইকে বলেন। প্রথম দিকে জুঁই মোশাররফ করিমের সেই ভালোবাসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও কয়েক দিন পর জুঁইয়ের মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’সূচক সম্মতি বের হয়। বরিশালের সন্তান মোশাররফকে শুরুতে জুঁইয়ের পরিবার মেনে নিতে পারেননি। অবশেষে মোশাররফ-জুঁই চার বছর প্রেমের পর ২০০৪ সালে বিয়ে করেন। একমাত্র সন্তান রোবেন রায়ান করিমকে নিয়ে এখন তাঁদের সুখের সংসার। দাম্পত্য জীবনের এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় এই জুটি।

ফারুকী-তিশা: নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মজার ছলে অভিনয় তারকা তিশাকে বলতেন, ‘তোমার বড় বোন থাকলে তাঁকে বিয়ে করতাম।’ তিশা বুঝতে পেরেছিলেন ফারুকীর মনের কথা। তবুও ফারকীর কথার উত্তরে বলতেন, ‘আমার বড় বোন থাকলে সত্যি সত্যিই আপনার সঙ্গে বিয়ে দিতাম।’ তবে এই লুকোচুরি বেশি দিন থাকেনি। ফারুকী সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিশাকে। কিন্তু বিয়েটা হবে হচ্ছে করেও বছরের পর বছর আটকে ছিল। অবশেষে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই ফারুকী ও তিশা ঘটা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জনপ্রিয় এই তারকা জুটি আদর্শ দম্পতি হিসেবে একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন অর্ধযুগ।

কনকচাঁপা-মইনুল ইসলাম খান: কনকচাঁপার কিশোর বয়স থেকেই মইনুল ইসলাম খানের সঙ্গে পরিচয়। বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’র শিল্পী ছিলেন কনকচাঁপা। সেখানেই দুজনের দেখা-সাক্ষাৎ হতো। কনকচাঁপার প্রথম গাওয়া গানের সুরকার ছিলেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান। প্রথম গাওয়া গানের সুরের প্রেমে পড়েছিলেন কনকচাঁপা। একসময় সুর থেকে সুরকারের প্রতি ভালো লাগা অনুভব করেন। পরবর্তী সময়ে পারিবারিকভাবে তাঁদের দুজনের বিয়ে হয়। প্রায় তিন দশক একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন এই তারকা দম্পতি।

আজিজুল হাকিম-জিনাত হাকিম: নাট্যজগতের পরিচিত জুটি আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আজিজুল হাকিম তখন জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা। নাটকের মহড়া করতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। মহড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাঁকে প্রায়ই দেখা যেত রোকেয়া হলের গেটে। একসময় জানা যায়, এই হলেই থাকতেন তাঁর জীবনসঙ্গী জিনাত। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখন তাঁদের সুখর সংসার। ভালোবেসে তাঁরাও কাটিয়ে দিলেন প্রায় দুই দশক।

ইনামুল হক-লাকী ইনাম: ড. ইনামুল হক ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। একই সঙ্গে তিনি একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। তাঁর দাম্পত্যসঙ্গী বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। লাকী ইনাম ১৯৭২ সালে ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ দলে যোগ দেন। একই দলে কাজ করতেন ইনামুল হক। সেখান থেকেই তাঁদের ঘনিষ্ঠতা। বিবাহিত জীবনের প্রায় তিন যুগ পার করেছেন তাঁরা। তাঁদের সংসারে রয়েছে দুই মেয়ে—হৃদি হক ও প্রৈতি হক।

রহমত আলী-ওয়াহিদা মল্লিক জলি: রহমত আলী-ওয়াহিদা মল্লিক জলি: নাট্যাঙ্গনের প্রিয় তারকা দম্পতি রহমত আলী ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি। তাঁদের দুজনের বাড়ি রাজশাহীতে। তবে দুজনের পরিচয় এবং কাছাকাছি আসা মূলত ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। ১৯৮৯ সালে দেশে এসে জলি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। রহমত আলী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তবে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। টানা ছয় বছর প্রেম করার পর ১৯৯০ সালে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন তাঁরা। রজত আর সহন নামের দুই পুত্রসন্তান তাঁদের। ইতিমধ্যে বিবাহিত জীবনের রজতজয়ন্তী পূর্ণ করেছেন তাঁরা।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!