• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলার রায় যুগান্তকারী : হাইকোর্ট


আদালত প্রতিবেদক নভেম্বর ২৬, ২০১৭, ০১:৫৩ পিএম
বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলার রায় যুগান্তকারী : হাইকোর্ট

ঢাকা: বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলার রায় যুগান্তকারী বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। রোববার সকাল ১০:৫৬ মিনিটে এ মামলা আপিলের রায় ঘোষণা শুরু করা হয়।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা শুরু করা হয়। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এ মামলাটির আপিল শুনানি করতে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন।

আদালত তার মতামতে বলেন, এটি একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার আপিল শুনানিতে বিচারকি আদালতের সকল কাগজপত্র, নথিপত্র ও পর্যবেক্ষণসহ সব বিষয় আমরা গুরুত্বের সাথে দেখেছি। বিবেচনা করেছি। আদালত বলেন, ২০০৯ সালে পিলখানার দরবার হলের হামলাটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চালোনো হয়।

পর্যবেক্ষণের শুরুতেই বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বলেন, এ মামলা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পরে তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানায় আদালত।

আদালত তার মতামতে বলেন, আমেরকিা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মনোবিজ্ঞানি, অপরাধ বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিশেজ্ঞদের মতামত অনুসরণ করা হয়েছে রায়ে। রায়ে ইসলাম ধর্ম, সনাতন ধর্মের বিষয়টি সামনে রাখা হয়েছে। আদালত বলেন, ঐতিহাসিক এ ঘটনায় রাষ্ট্র সমাজ ও পারিপার্শিকতা লক্ষ্য রাখা হয়েছে। আসামিরা এ মামলা খালাস চেয়ে আবেদন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সাজা বৃদ্ধি চেয়েছে। আমরা উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক, বিভিন্ন নথিপত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা করেছি। পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উভয়পক্ষ ভালো ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীণতা যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কথা বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।

আদালত আরো বলেন, বিডিআর বাহিনী থেকে সেনাবাহিনী ও বিডিআরে মধ্যে ফাটল ধরাতেই এ হামলা সংঘটিত করা হয়েছে। বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও সাজা বাতিলে আসামিপক্ষের আপিলের রায় এটি। রায় মোট ১ হাজার ৫৫ পৃষ্ঠার।   

রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রায়ে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে।

এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!