• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশিদের দ্বারা বছরে পাচার ৪০ হাজার কোটি টাকা


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১৫, ২০১৬, ১০:৩০ পিএম
বিদেশিদের দ্বারা বছরে পাচার ৪০ হাজার কোটি টাকা

লাখ লাখ বিদেশি অবৈধভাবে এ দেশে কাজ করে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই ওই বিদেশীরা এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তাদের উপার্জিত অর্থের বড় অংশই নির্বিঘ্নে নিজ দেশে পাঠাচ্ছে।

বর্তমানে এদেশে অবৈধভাবে দুই লাখের বেশি বিদেশী নাগরিক রয়েছে। যার বেশিরভাগই ভারতীয়। তার পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। তবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যানুযায়ী, শুধু ভারতেরই পাঁচ লাখ নাগরিক কাজ করে বাংলাদেশে। আর ২০১৫ সালেই তারা দেশে নিয়ে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিপুলসংখ্যক অবৈধ বিদেশীর অবস্থান অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ দেশে অবস্থানরত বিদেশীদেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যানই সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে নেই। ফলে সরকারি কোনো দায়িত্বশীল দফতরই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না। এমনকি অবৈধভাবে এদেশে কতো সংখ্যক বিদেশী বসবাস করছে তার সঠিক হিসাব বের করারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

সূত্র জানায়, এ দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশীদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়। সেগুলো হল- বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং এনজিও ব্যুরো। কিন্তু ওই তিন প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী এদেশে বৈধভাবে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশী দেশে কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের সংখ্যা ২ লাখের বেশি।

প্রতিবছরই ওই বিদেশীরা ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী এদেশে বিদেশীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার। তিন প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া যেসব বিদেশী এদেশে কাজ করছেন তারা অবৈধ। আর অবৈধ অনেক বিদেশীই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

জাল টাকা তৈরির অপরাধে শ্রীলংকার কয়েকজন নাগরিককে আটক করা হয়। তাছাড়া প্রতারণা, জালিয়াতি, মাদক ও যৌন ব্যবসাসহ এমনকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যও পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার প্রশ্নে অবৈধ বিদেশীর বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কারণ বিদেশীদের অবৈধভাবে থাকার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। যদিও ইতিপূর্বে এই বিষয়ে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল।

সূত্র আরো জানায়, এদেশে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৫৫টি দেশের নাগরিকরা কাজ করছে। তার মধ্যে প্রথম অবস্থানে ভারত। তারপরেই রয়েছে শ্রীলংকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আফ্রিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। তারা মূলত গার্মেন্টস ও বস্ত্রখাতে জড়িত। বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে এদেশে ১৪ হাজার বিদেশী কাজ করছে। আর বেপজার অনুমতি নিয়ে ২ হাজার এবং এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে আরো ৫শ’ বিদেশী নাগরিক কাজ করছে।

তাছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন, আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউজ, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, নানা ধরনের পার্লার, এমনকি শোরুমের কর্মচারী হিসেবেও কাজ করছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী এদেশে বিদেশী জনশক্তির সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। বিদায়ী ২০১৫ সালে ওই বিদেশীরা ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ নিজ দেশে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৪০ হাজার কোটি টাকা। ওই টাকায় প্রায় ২টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। ওছাড়া ওই পরিমাণ অর্থ দেশের মোট রেমিটেন্সের এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশীরা যে পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠান তার এক-তৃতীয়াংশই আবার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এদিকে বিদেশী নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। তারপর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত দিলে প্রাথমিকভাবে কাজের অনুমতি দেয়া হয় এবং প্রয়োজনে পরবর্তীতে আবেদন করারা হলে তা নবায়ন করা হয়। কিন্তু অবৈধ বিদেশীরা দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান সঙ্কট সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছে। বর্তমান আইনে বিদেশীদের অর্জিত আয়ের ৩০ শতাংশ কর দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে কাজ করার কারণে তারা কর দিচ্ছে না।

যদিও আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে বাংলাদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশীদের নিয়োগ দিলে ওই কোম্পানির প্রদেয় আয়করের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ওই বিধান কার্যকর হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে কোনো বিদেশী কাজ করবে তা কোনো দেশই এখন আর মেনে নেয় না। তাতে দেশের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। কারণ অনুমতি ছাড়া কাজ করার মানে হলো তারা যে পরিমাণ অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে তার পুরোটাই অবৈধ। তাছাড়া বিষয়টির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। মাঝে-মধ্যে সীমান্ত অতিক্রমের সময় অনেক বিদেশী ধরা পড়ছে। তাদের অনেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কঠোর মনিটরিং ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নেই।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন বিদেশীদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তার আগের একটি তালিকা থাকলেও ওই তালিকা অনুযায়ী অবৈধ বিদেশীদেও এদেশে বর্তমান অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাদের শনাক্ত করতে আইনশৃংখলা বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মাঝে-মধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!