• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতের অভাবে কুষ্টিয়ায় পানির প্লান্ট অচল


কুষ্টিয়া সংবাদদাতা ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮, ০৪:০৮ পিএম
বিদ্যুতের অভাবে কুষ্টিয়ায় পানির প্লান্ট অচল

কুষ্টিয়া : আর্সেনিকপ্রবণ জেলার তালিকায় কুষ্টিয়াও রয়েছে। মানুষকে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহে কুষ্টিয়ায় আয়রণ রিমোভার প্লান্ট (আই আর পি) প্রকল্পের অধীনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমারখালী, ভেড়ামারা ও মিরপুর পৌরসভায় প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি শক্তিশালী পাইপলাইনের পাম্প স্থাপন করা হয়। এটা চালু করা হলে আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় পাম্পগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ যেমন নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে স্থাপিত এসব পাম্প। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ দিচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ-ছয় বছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও কুমারখালী পৌরসভায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের পাওনা বিদ্যুৎ বিল রয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগ তাগাদা দিলেও বকেয়া বিল পরিশোধ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌর এলাকায় বছর দুয়েক আগে নিরাপদ পানি সরবরাহের তিনটি প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাইপলাইনের পানির পাম্পগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে এসব পাম্প স্থাপন করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। ফলে আর্সেনিকপ্রবণ এসব এলাকার মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র শামীমুল ইসলাম ছানা জানান, স্বয়ংক্রিয় এসব পাম্প স্থাপন করা হলেও শুধুমাত্র বিদ্যুতের অভাবে অকেজো পড়ে রয়েছে।

ভেড়ামারা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল জানান, আমাদের পৌর এলাকায় নিরাপদ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। আমাদের দাবি ছিল পৌর এলাকায় নিরাপদ পানির প্লান্ট স্থাপনের। পৌর কর্তৃপক্ষ সেই দাবি পূরণ করলেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে প্লান্টগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র শামীম-উল ইসলাম ছানা জানান, এই পৌরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি নতুন নয়। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বকেয়া বিল ছিল। সে বোঝা আমার ওপর চেপেছে। তারপরেও সীমিত আয়ের মধ্যে বিল পরিশোধে বহুবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বকেয়া পরিশোধ সাপেক্ষে পাম্পের সংযোগ দিতে চায়। ফলে কাঙ্খিত পানির প্লান্ট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

একই অবস্থা কুমারখালীর পৌরসভারও। তাদের কাছেও বিদ্যুৎ বিভাগের বিল বকেয়া রয়েছে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। পাঁচ ছয় বছরের এই বকেয়া বিল পরিশোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর বিল পরিশোধ না করায় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পানির প্লান্ট প্রস্তুত থাকলেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুন জানান, আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতে রাজি আছি। কিন্তু যে শর্তে বিল দিতে চাই সেই শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগ নিতে চায় না। আমাদের কিস্তি করে দিলে পর্যায়ক্রমে বিল পরিশোধ করা সম্ভব। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী হাচানুজ্জামান জানান, মিরপুর পৌরসভায় খুব দ্রুতই পানির পাম্প চালু হবে।

আর কুমারখালী ও ভেড়ামারা পৌরসভায় এ পাম্প দ্রুত চালু করতে পৌরসভার মেয়র ও বিদ্যুৎ বিভাগ উভয় পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সংকট নিরসন হবে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন আটটি পৌরসভায় প্রায় নয় কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও কুমারখালী পৌরসভার বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। পুরনো এসব বিল পরিশোধে বহুবার তাগাদা দেওয়া হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওই দুই পৌরসভার বিরুদ্ধে উকিল নোটিশও পাঠানো হয়েছে। তারপরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!