• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে কৌশলী আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৬, ০১:২৪ পিএম
বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে কৌশলী আ.লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি

অসংখ্য বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে দুই-একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই নিয়ে প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের। ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ মনে করছে, ইউপি নির্বচনে যে পরিমাণ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে ততটা হয়নি। প্রথম ধাপে ৭৩৮টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলটির দাফতরিক হিসাব মতে, সেখানে মাত্র ২০শতাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর এ সংখ্যাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের ধারণা ছিল ডাবলেরও বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবেন। সেখানে মাত্র এক-দুই শত বিদ্রোহী প্রার্থীর হিসেবে পাওয়া গেছে। তারা আরও জানান, ইউপি নির্বাচন একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের। এখানে পৌর নির্বাচনের মতো কঠোর অবস্থান গ্রহণ ঠিক হবে না। তাই এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নমনীয় কৌশল গ্রহণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ইউপি নির্বাচনে হিসাব করলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। এ সংখ্যা আরও হতে পারত। কিন্তু এখানে যে পরিমাণ বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা গেছে, তা প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ কতটা শৃঙ্খলিত। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছি না।

অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনও শাস্তির প্রয়োজন পড়বে না। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যে নেতাই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, সেই নেতা তৃণমূলেই শাস্তি পেয়ে যাবেন। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যিনিই প্রার্থী হবেন, তার অবস্থা শেষ পর্যন্ত হারলেও খারাপ হবে, জিতলেও খারাপ হবে। কারণ ওই নেতা ওই এলাকায় আর দলীয় অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা তাই ইউপি নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্র থেকে কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে নন।

এদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা না থাকায় ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রেীয় দুই-একজন নেতা হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, আমরা মনে করি, ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান নমনীয়। কঠোর অবস্থান থাকলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে বিশেষ  নির্দেশনা আমাদের কাছে পাঠাতেন। 

তবে, এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, তৃণমূল নেতাদের এসব বক্তব্য অজুহাত মাত্র। এগুলো বলে বিষয়টিকে সহজ করে দেখা ঠিক হবে না। দল করলে শৃঙ্খলা মানতে হবে।

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সূত্র জানায়, আসলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের হওয়ায় রাজনীতিতে তৃণমূল পর্যায়ে এটি নিয়ে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা চিড় ধরুক তা চান না ক্ষমতাসীনরা। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তাদের ব্যাপারে কঠোর কোনও শাস্তি নেয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী আওয়ামী লীগ। ওই সূত্রগুলো জানায়, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো প্রথম বারের মতো দলীয় ব্যানারে হচ্ছে। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রভাব কিছুটা থাকবেই। এ হিসাব মাথায় রেখেই এগুতে হবে। যেহেতু হঠাৎ করেই দলীয়ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেহেতু ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা মেনেই নির্বাচনি বৈতরণী পাড়ি দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আমাদের দলের ভেতরে কোনও মাথাব্যথা নাই। তিনি বলেন, সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা বেশি। আওয়ামী লীগেও নেতাকর্মীর সংখ্যাও বেশি। তাই দ্রোহ-বিদ্রোহ থাকবেই। তারপরও যতখানি শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টা রয়েছে আমাদের। তিনি বলেন, মাথায় রাখতে হবে, এবারই প্রথম দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!