• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনামূল্যের থেরাপিসেবায় বদলে গেছে জীবন


গাইবান্ধা প্রতিনিধি মার্চ ২৩, ২০১৭, ০১:৫২ পিএম
বিনামূল্যের থেরাপিসেবায় বদলে গেছে জীবন

গাইবান্ধা: প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কের সুখশান্তির বাজার এলাকায়। এখানে বিনামূল্যে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সেবা প্রদান করা হয়। এখানে সেবা নিয়ে আজ অনেকেই যেমন অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হওয়া থেকে সুবিধা পাচ্ছেন, তেমনি সেবার মান অনেক ভালো হওয়ায় প্রতিদিনই এখানে আগত প্রতিবন্ধী সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে শহরের বনবিভাগ রোডে কেন্দ্রটি গড়ে উঠে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ডিজিটাল ট্রাকশন মেশিন, আলট্রা সাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, সিপিএম, আইএফটি, টেন্স, আইআরআরসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিনামূল্যে থেরাপি সেবা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য রয়েছে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধী কর্ণার। এখানে রকিংহর্স, মিউজিক্যাল কিবোর্ড, কানেকটিভফোর, পাজল, এবাকাসসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধিবিকাশে সহায়তা করা হয় এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে অভ্যস্ত করে তোলা হয়।

এই কেন্দ্রে একজন করে কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি) ও ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট, দুইজন থেরাপি সহকারি, একজন করে টেকনিশিয়ান (শ্রবণ) ও টেকনিশিয়ান (দৃষ্টি) দ্বারা বিনামূল্যে থেরাপি সেবা দেয়া হচ্ছে। এখানে শারীরিক, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী, দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিসহ সাধারণ ব্যথাজনিত রোগীরাও সেবা পাচ্ছেন। এছাড়াও এখানে রয়েছে চোখ ও কানের পরীক্ষার ব্যবস্থা।

গাইবান্ধার বেসরকারি ফিজিওথেরাপি সেন্টারগুলো যেখানে রোগীপ্রতি একবারের থেরাপি সেবা বাবদ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ফি নিয়ে থাকে, সেখানে এ কেন্দ্রে সকল সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার পর থেকে প্রায় ৩ হাজার জনকে ২৫ হাজার বার ফিজিওথেরাপিসহ বিভিন্ন থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এই কেন্দ্র থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে হুইল চেয়ার ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সাদাছড়ি প্রদান করা হয়। এই কেন্দ্রের কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপকৃত হওয়ায় প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

সাদুল্লাপুর উপজেলার হামিন্দপুর গ্রামের রেজাউল মিয়ার ছেলে ফুয়াদ মিয়া (৭) জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসি (সিপি) তে আক্রান্ত ছিল। সে হাটতে ও কথা বলতে পারতো না। এই প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে সেবা গ্রহণ করে এখন সে হাটতে ও কথা বলতে পারে। শিশু ফুয়াদের মতো গাইবান্ধার আরও অনেকে এখানে বিনামূল্যে থেরাপি সেবা নিয়ে ফিরেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে। তারা ঠিকমত হাটা চলা ও দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারছেন।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, সারাদেশে এমন আরও ১০২টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করছে। এখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস) ব্যক্তিদেরও বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রায় ২৫ লাখ লোকের এই জেলায় প্রায় ২৭ হাজার জন প্রতিবন্ধী শনাক্ত করা হয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা এক দশমিক ১৩ ভাগ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!