• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাজেট ২০১৭-১৮

বিনিয়োগ ও সঞ্চয়কারীদের জন্য দুঃসংবাদ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩০, ২০১৭, ০৩:৫১ পিএম
বিনিয়োগ ও সঞ্চয়কারীদের জন্য দুঃসংবাদ

ঢাকা : আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়কারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য দুঃসংবাদ থাকছে। একদিকে অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে ব্যাংক গ্রাহকদের আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী চূড়ান্তও করেছেন বলে জানা গেছে। আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে প্রস্তুত করা নীতিমালা জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে ব্যাংকে বাৎসরিক জমার ওপর ১০ শতাংশ আয়করের সঙ্গে বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ কর কেটে নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, এতে একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের সংকটে পড়তে পারে, অন্যদিকে দেশে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে যেতে পারে। উদ্যোক্তারাও ঋণ গ্রহণে নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। এর ফলে অনেক গ্রাহক টাকা তুলে ঘরে রেখে দিবেন অথবা স্থায়ী খাতে বিনিয়োগ করবেন। এছাড়া রেমিটেন্সের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবেও নন-ব্যাংকিং খাতে লেনদেন আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সঞ্চয়কারী, ব্যাংক গ্রাহক ও পেনশনভোগীরাও। তবে অনেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থসংগ্রহ কমিয়ে ব্যাংক খাত থেকে বাড়াতে পারে। তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা ও সুদ খরচ কমে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ব্যাংকের বার্ষিক লেনদেনের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী জুলাই থেকে ব্যাংকে বছরে কেউ পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করলে, তার কাছ থেকে আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হবে ৩০ হাজার টাকা।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সমপরিমাণ অর্থের জন্য আবগারি শুল্ক হিসেবে বছরে কেটে নেয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। বিদ্যমান নিয়মে যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন, তারা নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত কর দেন। এর বাইরে ওই টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বাবদ আবারও কর দিতে হয়। যা আগামী অর্থবছরে দিতে হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিগুণ হারে। চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের ওপর এক হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছে সরকার। এনবিআরের প্রস্তাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ অর্থ লেনদেন করলে আগামী ১ জুলাই থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে নেয়া হবে তিন হাজার টাকা।

এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনে চলতি অর্থবছরে কর সাড়ে সাত হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নিজের টাকা তুললেও দ্বিগুণ কর দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন, তারা নির্দিষ্ট হারে কর দেন। ব্যাংকে যে টাকা থাকে, তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত হয় এবং ট্যাক্সও নেয়া হয়। কাজেই একই টাকার ওপর আবার আবগারি শুল্ক কেটে নেয়া স্বাভাবিক নয় বলেই আমি মনে করি। এতে ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অন্যান্য সোর্স বৃদ্ধি না করে একই জায়গা থেকে বারবার ট্যাক্স নেয়া কোন ভালো লক্ষণ নয়। করের আওতা না বাড়িয়ে এসব করার কোন মানেই হয় না বলে মনে করেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটের জন্য এনবিআরের চূড়ান্ত করা শুল্ক প্রস্তাব ইতোমধ্যে সই করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।

তবে এনবিআরের প্রস্তাব অনুযায়ী ক্ষুদ্র লেনদেনে সর্বনিু ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও (২০১৭-১৮) ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন আবগারি শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও ঋণের ওপর ২০০ টাকা কেটে নেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে নেয়া হয়েছে ১৫০ টাকা । এক লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও ঋণের ওপর চলতি বাজেটে আবগারি শুল্ক ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। আগামী অর্থ বছরে তা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। ১০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের ওপর চলতি অর্থবছর এক হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হবে।

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশের উপরে সুদ দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর মতে এটি বাজার হারের চেয়ে চার শতাংশ বেশি রয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদ হার কমানো হবে। তবে কত কমানো হবে তা পরিষ্কার করে বলেননি তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও এটি সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। সরকার বাজার থেকে অর্থ তুলে নিতেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তবুও বর্তমানে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগে ক্ষেত্র না থাকায় এটি সামাজিক নিরাপত্তার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কিছুটা ভেবে নিতে হবে সরকারকে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমিয়ে এখাত থেকে অর্থ সংগ্রহ কমাতে পারে বলেও অনেকে অভিমত। বর্তমানে এক ব্যক্তি একটি নামে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চপত্র কিনতে পারে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, তিন মাসের ফিক্সড ডিপোজিটে ব্যাংক গুলো এখন সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ দেয়। দেশে এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ। ব্যাংকের নমিনাল রেট থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে আমানতের প্রকৃত সুদহার বর্তমানে ঋণাÍক অবস্থানে রয়েছে। এর ওপর যদি বাজেটে ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়, তাহলে আমানতকারীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে জমি, ফ্ল্যাট, গহনা কেনাসহ বিভিন্ন ভোগে অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা বেড়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে আমানতকারীদের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!