• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিভক্তিই বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পরাজয়ের মূল কারণ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬, ০১:০৪ পিএম
বিভক্তিই বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পরাজয়ের মূল কারণ

বিশেষ প্রতিনিধি

আইন অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট বারের পরই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়ে থাকে ঢাকা আইনজীবী সমিতি। এ নির্বাচনের ফলাফল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মতামতকে প্রভাবিত করে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিভক্তিই বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পরাজয়ের মূল কারণ বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যে কারণে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বার বার পরাজিত হচ্ছিলো তা ছিল তাদের অভ্যন্তরীণ অনৈক্য। এবার তারা সেই প্রশ্নে আর কোনো ছাড়া দেয়নি। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাই আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

এদিকে ঢাকা বারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের শোচনীয় পরাজয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে আদালত অঙ্গনসহ সর্বত্র। এই পরাজয় কি প্রত্যাশিত? এই বিপর্যয়ের কারণই বা কি। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। এবারের নির্বাচনে মূল লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলয়ের মধ্যে। নির্বাচনের শুরুতে এবং মধ্যবর্তী সময়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিললেও নির্বাচনের দু’দিন আগে দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে।

এবারের নির্বাচনে প্রার্থী মনোয়নকে নিয়ে বিএনপির আইনজীবী নেতারা কার্যত বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ বিভক্তির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী আইনজীবীদের বহুমাত্রিক উদ্দেশ্য। আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনও এ বিভক্তিতে ইন্ধন যুগিয়েছে।

তথ্য অনুয়ায়ী, হোসেন আলী খান হাসান মনোনয়ন না পাওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। দু’দফায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলেও ‘দলীয় স্বার্থ’ বিবেচনায় মনোনয়ন দেয়া হয়নি এ আইনজীবীকে। তবে গতবার তাকে এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। সেজন্য নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তিনি প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন না দেয়াটাকে তার কর্মী-সমর্থকরা সহজভাবে মেনে নেয়নি।

এছাড়া এ পদের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় যে, আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের মো. আয়ুবুর রহমান বিএনপিপন্থি নীল প্যানেলের প্রার্থীর চেয়ে ৪৭৫ ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন আলী খান হাসান ৫৬৯ ভোট পেয়েছেন। অনেকের মতে যদি এইপদে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকতো তাহলে এই পদে ফলাফল ভিন্ন হলেও হতে পারতো।

এদিকে নির্বাচনের আগে বিএনপি সমর্থিত বিদ্যমান কমিটি সমিতির বকেয়া টাকার জন্য প্রায় ৫ শতাধিক আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল করে। ওই সব আইনজীবীদের মধ্যে যাদের বয়স ৪০ বা তদোর্ধ্ব তারা নতুন করে সদস্য হলেও বেনাভোলেন্ট ফান্ডের টাকা পাবেন না। এসব সদস্যপদ বাতিল হওয়া আইনজীবীরা এবং তাদের সিনিয়র আইনজীবীরা বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নীরবে কাজ করেছেন। এছাড়া সদস্যপদ বাতিল হওয়া আইনজীবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বহু আইনজীবী ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপিকে ভোট দেননি। যা বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে আইনজীবীরা মনে করেন।

বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দলে কোনো বিভক্তি নেই। আসলে আওয়ামী লীগের এবারের অধিকাংশ প্রার্থীরা গত ৩টি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল। সাধারণ আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা সিমপ্যাথি ভোট পেয়েছেন। এছাড়া প্রায় এক হাজার আইনজীবী ভোট দিতে আসেননি। যা আমাদের পরাজয়ের কারণ।’ 

সবকিছু ছাপিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আঞ্চলিকতার ‘টান’। ঢাকা বারে বর্তমানে বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং অধুনা নোয়াখালী জেলার আইনজীবীদের মধ্যে প্রচণ্ড আঞ্চলিকতাবোধ গড়ে উঠেছে। তারা একাধারে দলের কর্মী সমর্থক হয়েও নিজেদের মনমতো প্রার্থী না পেলে এবং একই সঙ্গে ভিন্ন দলে নিজ অঞ্চলের প্রার্থী পেলে নীরবে তাকেই ভোট দেন। এ মনোবৃত্তিকে ‘গাছেরটা খেয়ে তলারটা কুড়ানোর’ মতো জঘন্য মনোবৃত্তি বলে বর্ণনা করেছেন অনেকে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ২৭টি পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিজয়ী হয়।

অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের সহ-সভাপতি, ট্রেজারার ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকসহ ৬ পদে বিজয়ী হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!