• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের কার্গো ভিলেজে মালামাল চুরি, প্রতিকার নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬, ০২:০৫ পিএম
বিমানের কার্গো ভিলেজে মালামাল চুরি, প্রতিকার নেই

বিশেষ প্রতিনিধি

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিনই যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মালামাল চুরি হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আকারে ছোট কিন্তু মূল্যবান পণ্য বেশি চুরি হয় বিমানবন্দর কার্গো হাউজ থেকে। চুরি হওয়া পণ্য ফেরত পেতে বিমানে অভিযোগ দিলে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। পণ্য চুরির ঘটনা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চালানের বাকি পণ্যও খালাস করে না বিমান। এছাড়া হয়রানি আরও বেড়ে যাওয়ার ভয়ে বিমানের কাছে অভিযোগ দেন না ব্যবসায়ীরা। শতশত অভিযোগ করেও পণ্য ফেরত পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এসব ঘটনার জন্য বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে কার্গো হ্যান্ডলিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এজেন্ট হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুষছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে এসব ঘটনাকে ‘নিয়ম’ বলেই মেনে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বরং অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির ঘটনায় বিমানের হাত থেকে গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং সরিয়ে নিতেও বিমান মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন। বিমান, ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিমান সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশন অথরিটির হলেও কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এককভাবে দুই ধরনের হ্যান্ডেলিং করে বিমান। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের আওতায় বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও যাত্রীদের লাগেজসহ বিভিন্ন সেবা দেয়া হয়। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আওতায় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানিতে সেবা দেয়া হয়। যদিও ১৯৬৯ সালের দ্য কাস্টমস অ্যাক্টের ১২ ধারা অনুযায়ী এসব সেবা দিতে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিমানের কোনো লাইসেন্স নেই। এয়ারলাইন্স হিসেবে বিমানের শুধু যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সেবা দেয়ার কথা।

বিমানের কার্গো ভিলেজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন লোডাররা। স্বল্প মজুরির কাজ হলেও লোডারের কাজ পেতে অনেকেই আগ্রহী। এমনকি লোডার নিয়োগে রয়েছে বিমানের কর্মকর্তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। লোডারদের মাধ্যমেই ব্যাগ ও পণ্য সরবরাহ করা হয় যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিমান বন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার পর থেকে কার্গো ভিলেজে প্রবেশ করতে পারেন না সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। পণ্য বিমানবন্দরে এলেও খুঁজে পান না বিমানের কর্মীরা। যদিও টাকা দিলেই খোঁজ মেলে মুহূর্তেই। কোনো কোনো সময় মোটা অংকের টাকা আদায় করতে দু-তিন দিন আটকে রাখা হয় পণ্য।

সূত্র জানায়, পণ্য চুরি গেলে অনেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিমানের কাছে অভিযোগ দিলেও পণ্য ফেরত পান না। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই একটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ছাড়ের দায়িত্ব পায় মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ। সে চালানে ১ হাজার কার্টনে ২০ হাজার মোবাইল সেট থাকার ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৮০ পিস মোবাইল বুঝিয়ে দিতে পারেনি বিমান। এই ঘটনায় ১৩ জুলাই তারিখে বিমানের কাছে আলাদা আলাদা লিখিত অভিযোগ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসবি টেল এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ। যদিও এখন পর্যন্ত পণ্য ফেরত বা ক্ষতিপূরণ পায়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে জানতে চাইল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। এমনকি এ বিষয়ে কথা বললে আরও বিপত্তিতে পড়তে হবে।’

গত ১০ ডিসেম্বর এক যাত্রীর লাগেজ কেটে ৪ হাজার ডলার চুরি করে এয়ারপোর্ট আমর্ড পুলিশের হাতে আটক হন বিমানের চার কর্মী। তাদের একজনের পায়ের মোজা থেকে উদ্ধার করা হয় ওই ডলার। প্রত্যেকের অর্থদণ্ডসহ এক বছর করে কারাদণ্ড দেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মন্ত্রণালয়েও এসেছে। বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন অভিযোগ করে, বিমান নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করে না। বিজিএমইয়ের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সমন্বয়ের দায়িত্ব বিমানের পরিবর্তে সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো ডেলিভারি নিতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। নষ্ট বা চুরি হলেও পণ্য ডেলিভারি নেয়ার সময় শতভাগ বুঝে পাওয়ার অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করে ডেলিভারি নিতে হয়। বৈঠকে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফএ) সভাপতি মাহবুবুল আনামও পণ্য পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার অভিযোগ করেন। বৈঠকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম আসাদুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাব দিতে হবে। এজন্য বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে একটি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করারও প্রস্তাব করা হয়। অভিযোগের অগ্রগতি অভিযোগকারীকে জানাতে করতে হবে। কার্গো ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন বিষয়ে অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব কথা বলে কী লাভ। প্রতিনিয়ত বিমানের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান মেলেনি। কার্গো ভিলেজ থেকে মালামাল চুরির ঘটনায় অভিযোগ দিয়ে ফেরত পাওয়া যায় না। বরং ভোগান্তি বাড়ে।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জন্য এখন আর কোনো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। তাহলে এমন নিরাপত্তাপূর্ণ স্থান থেকে কারা চুরি করে এটা পরিষ্কার। বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে লোডার পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

শেখ মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, ‘কার্গো ভিলেজ এলাকায় মালামাল রাখার স্থান নির্দিষ্ট নেই, ট্যাগিং ব্যবস্থা নেই। পণ্য ছাড়াতে পদে পদে টাকা দিতে হয়। দ্রুত মালামাল পাওয়া যায় না।’

জানতে চাইলে এসব অভিযোগ নিয়ে কোনো কথা বলেননি বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম আসাদুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা সেটি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে একটি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাও নেয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!