• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাজেটে চিকিৎসা গবেষণায় বরাদ্দ নেই

বিরল রোগীদের নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৭, ২০১৮, ০১:৩৫ পিএম
বিরল রোগীদের নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল

ঢাকা : নাক, কান, চোখ ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে কিশোরী নাদিয়া আক্তারের। রক্তক্ষরণ হয় তার নাভি দিয়েও। এতে যে তীব্র যন্ত্রণা হয়, তাতে কখনো কখনো সে অচেতনও হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা প্রায় সাত মাস ধরে হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করছেন। চিকিৎসকরা তার রোগটিকে বিরল বললেও চিহ্নিত করতে পারছেন না। রোগের কারণ ও উপশম ধরতে পারছেন না। ফলে নাদিয়ার যথাযথ চিকিৎসাও হচ্ছে না।

দেশের বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই ভর্তি হচ্ছে নাদিয়ার মতো বিরল রোগে আক্রান্তদের কেউ কেউ। একটা সময় তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার কোনো হাসপাতালে। এরপর কারো কারো রোগ চিহ্নিত হচ্ছে। তবে দেশ-বিদেশে সেসব রোগের যথাযথ চিকিৎসা না থাকার কথাও জানা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় প্রমাণ হয়, ঢাকার বাইরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব প্রকট। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তো দূরের কথা, সাধারণ অনেক চিকিৎসার যন্ত্রও নেই। ফলে রোগীদের ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক কথায় দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা অনেকটা রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। নেই যথাযথ গবেষণাও। ফলে নতুন কোনো রোগে আক্রান্তরা ভর্তি হলে চিকিৎসকরা হিমশিম খান।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসা গবেষণায় দেশ অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ চিকিৎসকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও শিক্ষা উপকরণের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ নেই। সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে পারছে না বাজেট বরাদ্দ না থাকায়। একই অবস্থা বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও। তারা জানান, দেশে এখন সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩১টি ও বেসরকারি ৭৪টি। এর কোনোটিতেই গবেষণায় বরাদ্দ নেই। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও গবেষণায় কোনো বরাদ্দ নেই।  

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ২০০৫ সালে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি আট মাসে একটি নতুন রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে রোগের জীবাণু। এসব রোগ প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি গবেষণা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক সহ-উপাচার্য বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, গবেষণার বিকল্প নেই। এজন্য আলাদা বরাদ্দ থাকা উচিত। গবেষণা না থাকলে যেকোনো শিক্ষার মান পড়ে যায়। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কিশোরী নাদিয়া আক্তার এখন ভর্তি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩০৬ নম্বরের মহিলা ওয়ার্ডে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তার রোগ ধরা সম্ভব হয়নি।

ফলে তাকে কোনো ওষুধ সেবনের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে না বলে সম্প্রতি জানান হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মুক্তি রানী মণ্ডল। স্থানীয় একটি মাদরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়ার গত নভেম্বরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় নোয়াখালী জেলারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগটি নির্ণয়ের চেষ্টা না করেই তাকে ঢাকা পাঠানোর পরামর্শ দেন। তার পরিস্থিতি জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, নাদিয়ার রোগটি সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এর চিকিৎসা দেশে সম্ভব।

ঢাকা মেডিকেলের আরো কয়েকজন চিকিৎসকও মনে করেন, নাদিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। কারণ এর আগে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণি, বৃক্ষমানব হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজনদার, মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া, জোড়া শিশু তোফা ও তহুরার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এ হাসপাতালে। 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!