• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধীদলকে পাত্তাই দিচ্ছে না বিদেশিরা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৬, ০৭:৫৯ পিএম
বিরোধীদলকে পাত্তাই দিচ্ছে না বিদেশিরা

রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকা জাতীয় পার্টি (জাপা)। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাপার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিদেশি অতিথির সাক্ষাৎবঞ্চিত হলেন।

এবার চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হলেন রওশন এরশাদ। অনেক চেষ্টা-তদবির করেও শি’র শিডিউলে নিজের সাক্ষাতের বিষয়টি তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দলের ভেতরেও নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে।

দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নিজেও মনে করেন, মানুষ তাঁর দলকে বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করে না। গত ৩ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এরশাদ বলেছিলেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা হয় না। এই ‘ইমেজ সংকটের’ কারণে পৌর নির্বাচনে মানুষ জাপার প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, জন কেরি এবং সি চিন পিংয়ের সফর এ সত্যটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এটি জাপার জন্য লজ্জার। সাধারণ মানুষেরা অনেকে হাসিঠাট্টা করছে।

এদিকে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন ‘বিজনেস ডিল’ নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে নয়। জাপার সঙ্গে বৈঠক হলে হয়তো দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা খুশি হতেন। বৈঠক না হওয়া মুখরোচক আলোচনার ইস্যু হিসেবে ভালো, কিন্তু এটি রাজনীতির জন্য বড় কোনো ‘ফ্যাক্টর’ বলে তাঁরা মনে করেন না।

চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাষ্ট্রীয় শিডিউলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের বৈঠক নিয়ে কোনো তথ্য ছিল না। যদিও হোটেল লা মেরিডিয়ানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে শিডিউল বৈঠক করে খালেদা জিয়া ও বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দেন চীনা প্রেসিডেন্ট। তারা অন্তত ৪০ মিনিট কথা বলেন।

জাপার সাবেক এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিরোধী দলের বৈঠক না হওয়া জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিক উইংয়ের ব্যর্থতা। যারা বিদেশি ডেলিগেটদের বিষয়টি দেখেন, তারাই এই ব্যর্থতার কারণ।

গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশে কয়েক ঘণ্টার সফরে এসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ওই সফরেও তার সাক্ষাৎবঞ্চিত হন রওশন। যদিও ওই দিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার অফিশিয়াল প্যাডে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে রওশন জানান যে তার সঙ্গে কেরির বৈঠক হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যারির সঙ্গে সাক্ষাতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হতে পারে।

মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

গণমাধ্যম এই সংবাদ প্রচার করার পর জাপার সূত্রে জানা যায়, ওই দিন কেরির সঙ্গে কোনো বৈঠকই হয়নি রওশনের। আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়নি, উপরন্তু তাদের মধ্যে দু-এক শব্দের সৌজন্য বিনিময় হয়েছে মাত্র। কেরির ওই দিন ধানমণ্ডির ইএমকে সেন্টারে কর্মসূচি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জন কেরি আসেন এবং নির্ধারিত বক্তব্যের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট জন কেরিকে রওশন এরশাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জবাবে মুচকি হেসে হেঁটে চলে যান ব্যস্ত জন কেরি।

শুক্রবার রাতে চীনের প্রেসিডেন্টের সম্মানে বঙ্গবভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। ওই ভোজে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদসহ সংসদ সদস্যরাও আমন্ত্রণ পান। ওই ভোজেও অংশ নেননি রওশন এরশাদ। তার ঘনিষ্ঠ এক জাপা নেতা জানান, তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। অসুস্থ আছেন। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

এবারও ব্যর্থ রওশন


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!