• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধীহীন রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা করতে চায় আওয়ামী লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৬, ০৩:২৮ পিএম
বিরোধীহীন রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা করতে চায় আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে বিরোধীহীন রাজনীতির মাঠকে চাঙ্গা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সজাগ থাকবে দলটি।

দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপিবিহীন রাজপথে দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধীপক্ষের অনুপস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখতে এই মুহূর্তে অন্য কোনো কর্মসূচিও কেন্দ্রের হাতে ছিল না। তাই পৌর নির্বাচনের পর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এরই মধ্যে অসমাপ্ত জেলাগুলোতে সম্মেলন হওয়ায় দেশের রাজনীতিতে অনেকটাই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, আগামী ২৮ মার্চ ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দলে নিষ্ক্রিয় নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এতে করে তৃণমূল পর্যায়েও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের আমেজে রয়েছেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৬ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ মার্চ, দ্বিতীয় ধাপে ৭১০টি ইউনিয়ন পরিষদে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ৭১১টি ইউনিয়ন পরিষদে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭২৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ৭১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৬৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে ৪ জুন।

কমিশন জানিয়েছে, সারাদেশে ৪ হাজার ৫৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চলতি বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এ রূপ ৪ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন মোট ৬টি পর্যায়ে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে চলা বিএনপির লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পালন করে। টানা ৯২ দিনের কর্মসূচি শেষে ঢাকার ২ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটি বাস্তবায়ন করতে ৬৪ জেলাকে পৃথক রাষ্ট্রের ন্যায় গড়ে তোলা হবে। এর জন্য ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এক কোটি ৪৫ লাখ দক্ষ জনশক্তি গঠনের কাজ চলছে। জেলা পরিষদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্থানীয় সরকার পরিষদে পদায়ন করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান হবে দায়িত্বশীল ও সত্যিকারের জনগণের প্রতিষ্ঠান। এ জন্য আমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।

যদিও গত ২৬ জানুয়ারি সংসদ কার্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন, জেলা পরিষদ আইন, ২০০০-এর ১৯ ধারার ক-উপধারা অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন না পাওয়ায় এবং ২০ ধারার ২ উপধারা অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা না পাওয়ায় জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এ পর্যায়ে নির্বাচন কশিনের কিছু করণীয় নেই। আইন অনুযাযী সরকার সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নিধারণ করবে সে তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন নির্বাচন কমিশন পায়নি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে, আগামী অর্থবছরের আগে কিংবা পরেই জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে অচিরেই একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ৪ জুন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও পারে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাজসজ্জা কমিটি বৈঠক করে সারাদেশে দলের সম্মেলনের বার্তা পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল চাঙ্গা। আমি এখন এলাকায় গেলে যে পরিমাণ লোক দেখি ও আগ্রহ দেখি, এটা আগে ছিলো না। আমাদের সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে, মানুষ ভালো আছে। এতে করে অনেকেই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে চাঙ্গা হয়েছে।

নূহ-উল-আলম লেনিন সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল মানুষের নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। আমাদের নেতারা তৃণমূল প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যারা অভিযোগ করছে, তাদের কথার অর্থ এই তারা জিতলে সেটা গণতন্ত্র, না জিতলে সেটা গণতন্ত্র নয়।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস করি। আমরা সরকার ব্যবস্থায় যেমন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হচ্ছে। তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোও তৃণমূলে সংগঠনগুলো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এবং ক্ষমতায়ন করার ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!