• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তপ্রায় ফুলবাড়ীর কলুর ঘানি শিল্প


মেহেদী হাসান উজ্জল ফুলবাড়ী, (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানুয়ারি ৪, ২০১৮, ০৩:১৪ পিএম
বিলুপ্তপ্রায় ফুলবাড়ীর কলুর ঘানি শিল্প

দিনাজপুর : জেলার ফুলবাড়ীতে কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করায় ফুলবাড়ীতে খুলু (কলু)র ঘানি শিল্প বিলু্প্তির পথে। ফলে খাঁটি সরিষা তেলের স্বাদ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

আগে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোটায় ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে মাটির হাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করা হতো। অবশ্য হাট-বাজারেও ওই তেল বিক্রি করা হতো। এ তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন এক শ্রেণির কলুর ঘানি শিল্প।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে। কলু সম্প্রদায়ও এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এখন কাঠের ঘানির পরিবর্তে প্রযুক্তির আর্শিবাদে লোহার ঘানিতে ভাঙা হচ্ছে সরিষার সঙ্গে বিভিন্ন দ্রব্যাদি। ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা লোহার এ ঘানিগুলোতে কেবল সরিষায় নয় তিল, তিশি, পাম ও সোয়াবিনও ভাঙানো হয়।

তবে কোনো কোনো লোহার ঘানিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সরিষার সঙ্গে চালের গুড়া, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনে ভেজাল সরিষার তেল উৎপাদন করে। ভেজাল এ কৃত্রিম তেল দখল করেছে তেলের বাজার। কৃত্রিম তেল তারা কম দামে বিক্রি করতে পারলেও কাঠের ঘানিতে খুলু (কলু) সম্প্রদায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন করতেন তা কম দামে বিক্রি করতে পারতেন না। ফলে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারছেন না কলু সম্প্রদায়। এখন কলু সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্তপ্রায়।

তবে খুলুদের (কলু) ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা সাহা পদবী ব্যবহার করে থাকেন। সাহা পদবী ব্যবহারকারী লোকজন এখনো খুলু সম্প্রদায় বলে পরিচিত। এলাকাবাসী জানান, ফুলবাড়ী পৌরসভার কাঁটাবাড়ী গ্রামে ৩/৪ জায়গায় ও সুজাপুর, তেতুলিয়া, স্বজনপুকুর, মাদিলা, হড়হড়িয়াপাড়া, শিবনগরসহ বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ এলাকায় কলু সম্প্রদায়ের লোকেরা কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করতেন।

কিন্তু কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করায় তারা এ ব্যবসা বাদ দিয়ে বিভিন্ন পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন। কাঁটাবাড়ী গ্রামের নন্দলাল সাহা বলেন, আমার বাব/দাদার মূল ব্যবসাই ছিল কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করা। বর্তমান সময়ে এ তেলের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন করে পুষিয়ে উঠা কঠিন তাই আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা তেল মাড়াই করছি। টুনটুন সাহা বলেন, আগে আমি বাবার সঙ্গে কাঠের ঘানি দিয়ে তেল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রয় করতাম, বর্তমানে যুগের পরিবর্তনে তেমন আর পর্তা (সুবিধা) না হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!