• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষ অভিযানেও ধরা পড়ছে না চিহ্নিত অপরাধীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৭, ২০১৬, ০৩:১৫ পিএম
বিশেষ অভিযানেও ধরা পড়ছে না চিহ্নিত অপরাধীরা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। আর অভিযানের আগে প্রতিটি থানা এলাকার সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি ডিএমপির এই বিশেষ অভিযান চলছে। 

কিন্তু এই অভিযানে চিহ্নিত ও দাগি অপরাধীরা অধরা থেকে যাচ্ছে। তবে ঈদ-পরবর্তী ৫ দিন পর্যন্ত একটানা ডিএমপির বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ঈদ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এজন্য ডিএমপির সব থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা পৃথকভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে।

ছিনতাই, ডাকাতি, মলম ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা প্রতিরোধ এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করাই এই বিশেষ অভিযানের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। ডিএমপি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর সব থানা এলাকার চিহ্নিত ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় শতাধিক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। তাদের নেতৃত্বে রাজধানীতে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি হয়। কখনো কখনো তারা মানুষ খুন করতেও পিছপা হয় না।

সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ রাজধানীতে বেশ কিছু বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ও পুলিশের তালিকাভুক্ত বড় সন্ত্রাসীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ইতিপূর্বেও তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা চেষ্টা করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে তাদের কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে বলেও জানা যায়। আর বিদেশে অবস্থান করেই কোনো কোনো সন্ত্রাসী এদেশে তার সহযোগীদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা।

সূত্র জানায়, ডিএমপির বিশেষ অভিযানে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মহাখালী, মগবাজার, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, তুরাগ, লালবাগ এলাকা বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই বিশেষ অভিযান সর্বাত্মক রূপ নিয়েছে। যদিও রাজধানীর মার্কেটগুলোতে এখে না ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হয়নি। 

তবে অনেকেই মার্কেটে যেতে শুরু করেছেন। আস্তে আস্তে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। সে সাথে পাল্লা দিয়ে রাস্তায় নামবে  ছিনতাইকারীরাও। পাশাপাশি পেশাদার ডাকাত সিন্ডিকেটের সদস্যরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। কারণ  ঈদের আগে বাসাবাড়িতে লোকজন টাকা রাখার কারণে ডাকাতি বেড়ে যায়। ওসব বিষয় মাথায় রেখেই পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে রাজধানীতে রাতের বেলায় টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সড়কগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হচ্ছে। একই সাথে আবাসিক হোটেল, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনালসহ জনবহুল এলাকাগুলোতেও পুলিশের নজরদারি চালানো হচ্ছে।

আবাসিক হোটেলগুলোতে আসা লোকজনের তালিকা চেক করা হচ্ছে। ঈদের আগে রাজধানীর বাইরে থেকে আসা সন্ত্রাসীরা যেন আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান নিয়ে ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্যই আবাসিক হোটেলগুলোতে এবার কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে ডিএমপি ও গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত শতাধিক সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মিরপুরের শাহদাৎ, কালা মানিক, শাহজাহানপুরের কালা রিপন, কবির, লম্বু সেলিম, ল্যাড়া খালেদ, সোহরাওয়ার্দী, অংকুর, কিসলু, পারভেজ, রনি, সজিব, ফখরুল, কামাল, কালা মনির, ইসমাইল, আরিফ, টিপু, রফিক, চঞ্চল এবং ফর্সা রনি।

তারাই রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। শাহদাৎ ভারতে অবস্থান করলেও মিরপুর, পল্লবী এলাকায় তার বিশাল ক্যাডার বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাছাড়া আছে কালা মানিক। তার ২০-২৫ জনের একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। কালা রিপন শাহজাহানপুর ও আশপাশের এলাকায় খুন, চাঁদাবাজি, মাদক, ছিনতাইসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে।

মহাখালীর কবির ও লম্বু সেলিম পুলিশের তালিকায় দুর্র্ধষ অপরাধী ও ভাড়াটে কিলার। ডা. নিতাই হত্যা মামলার আসামি কবিরের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। মহাখালী ও আশপাশের এলাকাজুড়ে কবিরের রাজত্ব। মহাখালীর পারভেজ একবার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু আদালত থেকে বেড়িয়ে আবার সন্ত্রাসী কার্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বনানী, মতিঝিল, খিলগাঁও ও রামপুরা থানায় ১০-১২টি মামলা রয়েছে।

কিসলু, রনি, সজিব রামপুরা, রমনা, খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর এলাকার ডাবল মার্ডার মামলার অন্যতম আসামি। ওসব এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হত্যাসহ সব অপকর্মের অন্যতম হোতা। তাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। মগবাজার এলাকার ফখরুল, ফর্সা রনিকে গ্রেফতারে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অনেকবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রামপুরা, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, বাড্ডা এলাকার তাদের শেল্টার হোম রয়েছে।

যে কারণে তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ সব ধরনের অপরাধেই তারা জড়িত। রনি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় খুন ও চাঁদাবাজিসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। ওসব আসামি ডিএমপির বিশেষ অভিযানে এখনো গ্রেফতার হয়নি। যদিও বিশেষ অভিযানে এই ধরনের শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানও চলছে। বিশেষ অভিযান চালানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে রমজান মাস ও ঈদ সামনে রেখে ছিনতাই ও ডাকাতি থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দেয়া।

এই দুই ধরনের অপরাধ যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত বেশ কিছু দাগি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে অভিযানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!