• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিলো যে ৯ ছবি


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ১৬, ২০১৭, ০৯:১৪ পিএম
বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিলো যে ৯ ছবি

ঢাকা: ছবি মানুষের কথা বলে। মানবতার কথা বলে। অনেক সময় একটি ছবিই হয়ে উঠে বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এ রকম কিছু ছবি আছে যা মন ছুঁয়ে যায়, কাঁদতে বাধ্য করে একজন মানুষকে। আজ আমরা সেরকমই কিছু মর্মস্পর্শী ছবি নিয়ে কথা বলবো।

সাভারের রানা প্লাজার দৃশ্য

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে বাংলাদেশের রাজধানীর অদূরে সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধ্বসে পড়ে। উদ্ধারের সেই কটা দিন অবাক হয়ে দেখেছে পুরো বিশ্ব। কেঁদে বিশ্ব। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে তোলা হয় বিভিন্ন ছবি। এর মধ্যে তাসলিমা আক্তারের তোলা একটি ছবি পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। ছবিতে দুইজন মানুষের পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার যে ভীষণ আকুতি উঠে এসেছে এই ছবিতে, শত বলেও তা ব্যাখ্যা করা যাবে না। কি করে মৃত্যু হলো তাদের? তারা কি একজন আরেকজনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন? কেমন ছিলো তাদের জীবন, তাদের স্বপ্ন? না জানি কী ভীষণ ভালোবাসায় মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তারা! 

সিরিয়ার আইলান

২০১৫ সালের শেষের দিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়াতে থেকে প্রাণে বাঁচতে ভূমধ্যসাগর পারিদিতে গিয়ে গ্রিসের উপকূলের কস দ্বীপের কাছে নৌকা ডুবে ছোট্ট আইলানের দেহটি তলিয়ে যায়। ১৩ মাইল দূরে তুরস্কের উপকূলে এসে পৌঁছায় দেহটি। ওই নৌকাডুবিতে মারা যান তার মা বং বড় ভাই। শুধু বেঁচে থাকেন আইলানের বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি। এর পর বিশ্বে এই মর্মস্পর্শী ছবিটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইউরোপসহ বিশ্বের ধনি রাষ্ট্রগুলোতে স্বরণার্থী নেওয়ার ওয়াদা করে।

রোহিঙ্গা তাহাইত

ঠিক আইলানের মত এই চিত্র ভেসে উঠে গত ৪ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরে। জন্ম হয় আর এক আইলানের এর নাম তাহাইত। সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে ১৫ জনের একটি দল বাংলাদেশের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। মংডুর এই রোহিঙ্গারা নৌকায় চেপে বসেছিল। এ সময় নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারীর মরদেহ নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যায়। এর মধ্যেই ছিলো তাহাইত। এই ছবিটিও বিশ্ববিবেককে দারুন ভাবে নাড়া দেয়।

টুইন টাওয়ারে হামলার সময় উপর থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন এক ব্যক্তি

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার। পুরো ভবনে আগুন ধরে গেলে অনেকেই নিচে ঝাঁপ দেন জীবন বাঁচানোর আশায়। সেরকমই এক হতভাগ্য ব্যক্তির ছবি তুলেন এপ’র আলোকচিত্রশিল্পী রিচার্ড ড্রিউ। বলাই বাহুল্য যে মানুষটি বাঁচাতে পারেন নি নিজের জীবন।

ডিয়েগো ফ্র্যাজাও টোরকোয়াটো

প্রিয় শিক্ষকের জন্য বেদনার সুর ডিয়েগো ফ্র্যাজাও টোরকোয়াটো নামে ১২ বছরের এই ব্রাজিলিয়ান ছেলেটি তার প্রিয় শিক্ষকের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ভায়োলিন বাজাচ্ছে, চোখে বেয়ে ঝরে
পড়ছে তীব্র কষ্টের অশ্রু। সেই শিক্ষক ছোট এ ছেলেটিকে সঙ্গীতের সাহায্যে দারিদ্র ও সংঘাত থেকে মুক্তি পেতে সহযোগিতা করেছিলেন।

সুদানের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ছবি

১৯৯৩ সালে সুদানের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের এই ছবিটি হয়ে উঠে বিশ্ববিখ্যাত। ১৯৯৩ সালে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর ঝড় উঠে বিশ্বে। আর এর মাধ্যমেই আলোতে আসেন আলোকচিত্রশিল্পী কেভিন কার্টার। সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় তোলা এ ছবিটি ১৯৯৪ সালে জিতে নেয় পুলিৎজার পুরস্কার। এতে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষে খেতে না পেয়ে জীর্ণ-শীর্ণ একটি শিশু মাটিতে মূমুর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে, আর খুব কাছেই একটি শকুন বসে আছে। যেন কখন শিশুটি মারা যাবে ও এটা শিশুটিকে খেয়ে ফেলতে পারবে তারই অপেক্ষা। ছবিটি ভয়াবহ বিতর্ক তৈরি করে। ছবি তুলে শিশুটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা কেভিন করেছিলেন কি না? কেভিনের নিজেরও মনে হতে শুরু করে যে, তিনি হয়তো চাইলে শিশুটিকে বাঁচাতে পারতেন। তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকে ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও শিশুটি সে সময় মারা যায় নি, আরও বেশ কিছুদিন বেঁচে ছিল। নিয়ং কং নামের ছবির ছেলেটি মারা যায় ২০০৭ সালে।

কলম্বিয়াতে দেল রুইজ আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতে ১৩ বছরের এই মেয়েটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা পড়ে

যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় ১৯৮৫ সালে কলম্বিয়াতে আরমেরো নামে ছোট গ্রামের পাশেই নেভাদো দেল রুইজ নামে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। পুরো গ্রামের উপর এর প্রতিক্রিয়া ছিল ভয়াবহ। এতে ব্যাপক ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়। অমায়রা স্যানচেজ নামে ১৩ বছরের এই মেয়েটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা পড়ে। উদ্ধারকর্মীদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে টানা ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর সে মারা যায়।

ভূপালের গ্যাস ট্রাজেডির ছবি

ভূপালের গ্যাস ট্রাজেডি ১৯৮৪ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভূপালে একটি কীটনাশক তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটলে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইড গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ আহত হন, নিহত হন প্রায় ১৫ হাজারের মত মানুষ। ফটোসাংবাদিক পাবলো বার্থোলোমিউ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ছবিটি তারই তোলা যা দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে মাটিতে সমাহিত করার আগ মূহুর্তে তোলা হয়।

উগান্ডার দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী ছবি

মানুষ মানুষের জন্য উগান্ডাতে ১৯৮০ সালে চলছিল প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ। অনাহারের শিকার এক শিশুর হাত পরম মমতায় ধরে রেখেছেন দাতব্য সংস্থার একজন কর্মী। মর্মস্পর্শী এ ছবিটি তুলেছেন মাইক ওয়েলস।

সোনালীনিউজডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!