• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের রোমান্টিক শহর প্যারিস


ফিচার ডেস্ক মে ৮, ২০১৭, ০৯:৫৫ পিএম
বিশ্বের রোমান্টিক শহর প্যারিস

ঢাকা: বিশ্বের সবচে রোমান্টিক শহর কোনটি? এ প্রশ্নের উত্তরে একবাক্যে সবাই মেনে নেবেন ফ্যান্সের রাজধানী প্যারিসের কথা। কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল এই নগরী দুই হাজার বছরেরও বেশি ঐতিহ্যের অধিকারী। এ নগরীকে দেখে প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ বিরল। যারা একবার ফ্রান্সে বেড়াতে গেছেন আর পা পড়েনি প্যারিসে তা বিশ্বাস যেন হওয়ার নয়।যোগ্য নয়। প্যারিসের মতো গোছানো শহর পৃথিবীতে খুবই কম। প্রতিবছর লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে শহরটি।

শুধু কি পর্যটকদের প্রিয়, শহরটি নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল ও নবদম্পতিদের সময় কাটানোর জন্য বিখ্যাত। আইফেল টাওয়ার ছাড়াও এ শহরের মনোমুগ্ধকর বিষয় মেঘলা আবহাওয়া। পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ বাতাসে ঘুরে মুহূর্তেই আনন্দের জোয়ারে ভরে ওঠে প্রাণমন। এর সঙ্গে ফ্যাশনেবল রীতি, বিভিন্ন দেশের নানান পদের খাবার, নিরাপদে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ভালোবাসার শহর।

বিখ্যাত সিন নদীর পাশেই মনোমুগ্ধকর প্রেমের শহর প্যারিস। প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমানরা রাজত্ব করেছে এ অঞ্চলে। ফলে আজো পুরো শহর জুড়ে বড় বড় রোমান একোয়াডাট্র বা পয়ঃপ্রণালী। এখান থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে গোটা শহর জুড়ে। এসবের দু’পাশে ফুলের বাগানে রকমারী ফুলের বাহার।

রাতের প্যারিস

ফ্রান্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দর্শনীয় স্থান আইফেল টাওয়ার, সাঁজেলিজে, আর্ক দ্যা ত্রিওস্ফ, কোঁকড় মিউজিয়াম, প্যারিস সিটি হল, প্যারিস মিউজিয়াম, নোত্র দাম গির্জা, আর্ক দ্য ত্রিয়োম্‌ফ, বাজিলিক দ্যু সক্রে ক্যর, লেজাভালিদ্‌, পন্তেওঁ, গ্রঁদ আর্শ, পালে গার্নিয়ে, ল্যুভ জাদুঘর, ম্যুজে দর্সে, ম্যুজে নাসিওনাল দার মোদের্ন আরো কত কি। ফরাসিরা তো তুমুল আমুদে, সভ্য, সহজ, সরল। এরা পিয়ানো বাজিয়ে পুরো শহর জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে জটলা করে গান গাইতে থাকে। চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক, শামুক দিয়ে তৈরি ফরাসিদের খুব প্রিয় মুখরোচক খাবার ‘কুইয়া’। রাতের প্যারিস আরো রঙ ছড়ায়। প্যারিস তো নিশাচরী শহর। 

দুই সহস্রাধিক ঐতিহ্যের অধিকারী প্যারিস বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাজনীতি, শিক্ষা, বিনোদন, গণমাধ্যম, ফ্যাশন, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা- সবদিক থেকে এ শহরের প্যারিসের গুরুত্ব ও প্রভাব এটিকে অন্যতম বিশ্ব নগরীর মর্যাদা দিয়েছে। প্যারিস বা পারিস (ফরাসি ভাষায়: Paris

( শুনুন) পারি) উত্তর ফ্রান্সে ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে সিন নদীর তীরে অবস্থিত। প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে রাজধানী শহরটির প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ২২ লাখের ওপর।

প্রশাসনিক সীমানা ছাড়িয়ে প্যারিসকে কেন্দ্র করে অবিচ্ছিন্নভাবে একটি সু-বৃহৎ নগর এলাকা গড়ে উঠেছে, যা প্যারিস ‘নগর এলাকা’ (unité urbaine উ্যনিতে উ্যর্বেন) নামে পরিচিত। এখানে প্রায় এক কোটি লোকের বসবাস। এ নগর এলাকা ও তার আশেপাশের প্যারিস-কেন্দ্রিক উপ-শহরগুলি মিলে প্যারিস এয়ার উ্যর্বেন বা প্যারিস মেট্রোপলিটান এলাকা গঠন করেছে; যার জনসংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ। ইউরোপের এ জাতীয় মেট্রোপলিটান এলাকাগুলির মধ্যে এটি অন্যতম বৃহৎ।

ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস্‌ তথা প্যারিস অঞ্চল ফ্রান্সের অর্থনীতির কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। ২০০৬ সালে এটি ফ্রান্সের মোট জাতীয় আয়ের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি, ৫০০.৮ বিলিয়ন ইউরো (৬২৮.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) উৎপাদন করে। প্যারিসের লা দেফঁস (La Défense) ইউরোপের বৃহত্তম পরিকল্পিত বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে ফ্রান্সের প্রধান প্রধান কোম্পানিরগুলির প্রায় অর্ধেক সংখ্যকের সদর দপ্তর। বিশ্বের বৃহত্তম ১০০টি কোম্পানির ১৫টির সদর দপ্তর এই প্যারিসেই। এছাড়াও প্যারিসে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে। এদের মধ্যে আছে ইউনেস্কো, ওইসিডি, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স, কিংবা অ-প্রাতিষ্ঠানিক প্যারিস ক্লাব। বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পর্যটকের গন্তব্যস্থল প্যারিস। প্রতি বছর এখানে প্রায় তিন কোটি বিদেশি ভ্রমণে আসেন।

প্যারিসকে প্রেম বা রোমান্টিক শহর বলার পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ সব গল্প। সিন নদীর উপরে ঝুলন্ত ব্রিজটিকে ঘিরে সে গল্প তৈরি হয়েছে লোকের মুখে মুখে। ১৮০২ সালে নেপোলিয়ানের আমলে পথচারীদের জন্য তৈরি করা হয় এই ব্রিজ। এর ডান পড়েই প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভের মিউজিয়াম। কথিত আছে, এ ব্রিজের আরেক নাম তালাচাবি ব্রিজ। প্রেমিক-প্রেমিকরা দোকান থেকে তালা চাবি কেনেন। তালার ভেতরে প্রেমিক-প্রেমিকার নাম লিখে ব্রিজের রেলিং এর সঙ্গে তালাটি মেরে চাবিটি নদীতে ছেড়ে দেয়। নদীর অবাধ্য পানিতে হারিয়ে যায় চাবিটি। এর ফলে অজীবনের জন্য ভালোবাসা আর প্রেমে বাঁধা পড়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা। সে বাঁধন কখনই যাবে না ছুটে। এটাই প্যারিসের প্রেমিক-প্রেমিকাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!