• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীকে স্বচ্ছ করলেন এক আধ্যাত্মিক গুরু


মাহফুজ ইসলাম আরিফিন এপ্রিল ৩, ২০১৮, ০১:১৫ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীকে স্বচ্ছ করলেন এক আধ্যাত্মিক গুরু

ঢাকা : গঙ্গা ভারতের পবিত্র নদী হিসেবে পরিচিত। এটি পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবেও। এ নদীতে মানুষ পুণ্যান করে, এ নদীর জলও পান করে অনেকে। আবার এ নদীই ময়লা-আবর্জনা ফেলে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।

সরকারি সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে গেছে নদী পরিষ্কার করতে। হঠাৎ করেই গঙ্গাকে পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এলেন ভারতের এক প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক গুরু, সাধগুরু নামেই যিনি অধিক পরিচিত। লাখো-কোটি অনুসারী তার। তিনি একজন আলোকপ্রাপ্ত শিক্ষক। ইসা ফাউন্ডেশন তার বিখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।

২০১৭ সালের ২ অক্টোবর তিনি গঙ্গা পরিষ্কার অভিযানে সবাইকে ডাক দিলেন।  দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করলেন গঙ্গার পার ধরে। তার ডাকে সাড়া দিল ১৬০ মিলিয়ন মানুষ। ১৬টি প্রদেশজুড়ে তিনি ভ্রমণ করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং এনজিও কর্মীরাও। মুহূর্তের মধ্যে সাড়া পড়ে গেল সারা ভারতে। গঙ্গার দু’পারের অসংখ্য মানুষ স্বউদ্যোগেই তখন ঝাঁপিয়ে পড়ল তাদের মাতৃসম নদীটিকে বাঁচাতে। শুরু হলো বিপুল এক স্বতঃস্ফূর্ত কর্মযজ্ঞ, যা দেখে তাজ্জব বনে গেল সারা পৃথিবী। ছুটে এলেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশবিদরাও। এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়ে গেল পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনে।

২ মার্চ সাধগুরু তার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্কে। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বিশ্বের অনেক প্রখ্যাত পরিবেশবিদ, এনজিও কর্মী ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজনও।

সাধগুরু বললেন, পরিবেশ ও মানুষ শুধু সহ-অবস্থান করে। পরিবেশ সুন্দর না রাখলে মানুষ টিকতে পারবে না। মানুষই পরিবেশ নষ্ট করে। মানুষ ছাড়া প্রকৃতিকে আর কেউ নষ্ট করে না। মানুষের কারণে অন্যান্য প্রাণিজগৎও এখন হুমকির মুখে পড়ছে। গঙ্গার ওপর অসংখ্য প্রাণী নির্ভরশীল। গঙ্গা নষ্ট হয়ে পুরো একটা প্রাকৃতিক প্রাণ-চক্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

শুধু নদী পরিষ্কার নয়, ভবিষ্যতে এ নদীকে রক্ষা করতে নদীর দু’পার জুড়ে বিশাল অঞ্চলে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন সাধগুরু। তিনি বললেন, এখনো অনেক কাজ বাকি। গঙ্গা বিশাল নদী। তার পুরো পরিষ্কার করা এবং বাঁধরক্ষার জন্য দু’পারে গাছ লাগানো সহজ কাজ নয়। এর জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার, দরকার আন্তর্জাতিক সাহায্যও।

গঙ্গা ভারতের প্রাচীনতম ও জাতীয় নদী। এ নদীকে সে দেশের মানুষ দেবীজ্ঞানে পূজা করে। এ নদী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অববাহিকা, যার দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার। কলকারখানার বর্জ্য ও লোকালয়ের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদীটি দূষিত হয়ে গেছে। যদিও এটিকে ভারতীয়রা বিশুদ্ধ নদী বলে আখ্যা দেয়। অনেকের বিশ্বাস এ নদীর জল পান করলে অসুখও সেরে যায়। কিন্তু আবর্জনার কারণে নদীটি নাব্য হারাচ্ছে।

১৯৫১ সালে নদীটির জলপ্রবাহ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২৪ কিউবিক ফিট, ২০১১ সাল নাগাদ তা দাঁড়ায় মাত্র ৫৪ হাজার ৫৬১ কিউবিক ফিটে। এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার ১২৫ কিউবিক ফিট পানি মানুষ প্রাত্যহিক কাজে লাগাতে পারত। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ জলপ্রবাহের পরিমাণ হতো মাত্র ২৮ হাজার ৭৪৬ কিউবিক ফিট।

অথচ, একদিন এ গঙ্গা নদী ভারতের প্রধান কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। গঙ্গার অববাহিকাতেই গড়ে উঠেছিল ভারতীয় সভ্যতা। সাধগুরুর এ উদ্যোগ খুব দ্রুত বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সারা বিশ্বের জন্যও যেন তা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!