• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
দাঁতের যত্ন

বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতিতে রাখুন দাঁতের চিকিৎসা


ডা. আওরঙ্গজেব আরু জুলাই ২৪, ২০১৭, ১১:১৪ এএম
বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতিতে রাখুন দাঁতের চিকিৎসা

ঢাকা : ধর্ম-গোত্র বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নর-নারীদের জন্য বিয়ে জীবনের একটি অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ। জীবনকে গোছাতে, সাজাতে ও এগিয়ে নিতে বিয়ের কোনো বিকল্প নেই। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখতেই বৈবাহিক ভাবনা এসে উঁকি দেয়।

পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলতে থাকে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রাক-প্রস্তুতি। এই চলমান খোঁজাখুঁজির শেষ পরিণতি হচ্ছে বিয়ে। তাইতো বিয়েকে কেন্দ্র করে হাজারো আয়োজন। অসংখ্য প্রস্তুতি। শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম। দ্বারস্থ হতে হয় বিউটি পারলারগুলোর। কড়া মেকআপে চেহারার অনেক কিছু লুকানো গেলেও লুকনো সম্ভব হয় না অসামঞ্জস্য, অসুন্দর দু’পাটি দাঁতের হাসি। ছবিতে বেরিয়ে আসে দাঁতের অনুজ্জ্বলতা, আঁকা-বাঁকা কিংবা বিস্তর ফাঁকা দাঁত।

সারাজীবন আপনি যে দাঁত নিয়ে চলেছেন একটু অসচেতনতার কারণে বিয়ের সময় এই দাঁতই আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে লুকোতে হচ্ছে। তাই বিয়ের প্রাক-প্রস্তুতিতে অবশ্যই যোগ করে নেওয়া প্রয়োজন দাঁতের চিকিৎসা।

বিয়ের আগে অবশ্যই একজন ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। এতে করে সহজেই সনাক্ত করে নেওয়া সম্ভব হবে আপনার দাঁতের মৌলিক সমস্যাগুলোকে। বিয়ের আগে অবশ্যই দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নেওয়া জরুরি। তবে তা বিয়ের বেশ ক’মাস আগে করিয়ে নিলে ভালো ; এতে করে বেরিয়ে আসতে পারে দাঁত ও মাঢ়ির নানা সমস্যা। সুস্থতার প্রয়োজনে তাই আপনি আগেই এড়িয়ে যেতে পারেন এ ধরনের জটিলতা।

তাছাড়া স্কেলিং করালে সাধারণত দাঁত ও মাঢ়ির মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা হয়ে যায় ; যদিও তা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ঠিকও হয়ে যায়। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন- কেন স্কেলিং জরুরি ? উত্তরে অনেককিছু বলার থাকলেও অল্প কথায় যা দাঁড়ায়- দাঁত ও মাঢ়ির মাঝখানে জমে থাকা পাথর অপসারণ করার জন্যই এই স্কেলিং জরুরি। তাছাড়া ক্রমাগত দাঁত ক্ষয়, মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতে হলদেটে ভাব কিছুটা হলেও কমাতে এই স্কেলিং অত্যন্ত জরুরি। আপনার মুখ-গহ্বরের সুস্থতা-অসুস্থতার সামগ্রীক একটি ধারণাও আপনি পেয়ে যাবেন এই স্কেলিং-এর মাধ্যমে।

কিভাবে সম্ভব দাঁতের সৌন্দর্য বাড়ানো ? এক্ষেত্রে উত্তর একটাই- কসমেটিকস ও এস্থেটিক ডেন্টিস্ট্রি। সারাবিশ্বে কসমেটিক ও এস্থেটিক ডেন্টিস্ট্রি বহুল পরিচিত হলেও আমাদের দেশের মানুষ এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। অথচ এসকল বিষয়ে এক্সপার্ট ডেন্টাল সার্জন এখন আমাদের দেশেই প্রচুর।
কীভাবে দাঁতের সৌন্দর্য আপনার লাইফ স্টাইলকে সুন্দর করে তুলতে পারে তা এই কসমেটিক ডেন্টিস্ট্রির মূল বিষয়। এর মাধ্যমে আপনার মুখের দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব ; যেমন : দাগমুক্ত বিবর্ণ দাঁত, ভাঙা দাঁতের চিকিৎসা, দাঁতের মাঝে ফাঁকা, পড়ে যাওয়া দাঁত, এলোমেলো বা আঁকা-বাঁকা দাঁত, গজদাঁত বা অতিরিক্ত দাঁত, অপেক্ষাকৃত ছোট বা বড়ো দাঁত, উঁচু-নিচু দাঁত ইত্যাদি। ম

নে রাখতে হবে, আঁকা-বাঁকা দাঁতের জন্য আপনাকে অন্তত ৬-১৮ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। ১২ বছর বয়স থেকে অর্থোডোনটিক চিকিৎসা শুরু করা গেলেও ২৫-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত তা করা সম্ভব। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চিকিৎসার সফলতা অনেকাংশে কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম বয়সে এই চিকিৎসা শুরু করা ভালো। এই চিকিৎসায় একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একটি বিশেষ ধরনের ডেন্টাল অ্যাপলায়েন্স

পরে থাকতে হবে। এটি ধীরে ধীরে আপনার দাঁতকে সঠিক অবস্থানে এনে দেবে।

এই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসার প্রয়োজনে কখনো কখনো দাঁত ফেলে নিতেও হতে পারে ; দাঁত নিয়ে সারাজীবন মনকষ্ট নিয়ে চলার থেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে দুয়েকটি দাঁত ফেলে দেওয়া অনেক ভালো। বর্তমানে এর চিকিৎসা ব্যয়ও অকে কমেছে।

বিয়ের আগে আমরা অনেকেই হলদে দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকি। এর সঙ্গে যোগ দেয় সিগারেট কিংবা পানের দাগ ; যা নতুন সম্পর্কের শুরুতেই ভীষণ আপত্তিকর। স্কেলিং-এর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ; প্রয়োজন হতে পারে টুথ-ব্লিচিংও। পারলারে যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য স্লিচিং, ফেসিয়াল করা হয়, তেমনি দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য আছে বিশেষ ডেন্টাল ব্লিচিং-এর ব্যবস্থা। বিভিন্ন ধরনের ডেন্টাল ব্লিচিং-এর মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে জেনে নিন কোন ব্লিচিং আপনার দাঁতের জন্য উপযোগী।

দাঁতের দুর্গন্ধ বেশি হলে স্কেলিং-এর পর চিকিৎসক একটি দৈনন্দিন রুটিনও করে দিতে পারেন। সেটি ফলো করলেই আপনার মুখের দুর্গন্ধ চলে যাওয়া সম্ভব। আবার দাঁত ভাঙা থাকলে কিংবা দাঁতে ছিদ্র থাকলে বিয়ের আগেই তা ঠিক করে নেওয়া ভালো। নাহয় বৈবাহিক জীবনের শুরুতেই ঘটতে পারে স্বাস্থ্য বিপত্তি। হঠাৎ করে দাঁতে ব্যথা কিংবা দাঁতের শিরশির অনুভূতি আপনার আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে নিমিষেই ম্লান করে দিতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শমত রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্টসহ ক্যাপব্রীজের সকল চিকিৎসা করিয়ে নিতে হবে। সারাজীবন আঁকা-বাঁকা, ফাঁকা দাঁত নিয়ে আমরা চলেছি।
অন্যের বাঁকা কথাও শুনেছি, তাও সচেতন হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই না। কিন্তু বিয়ের আগে কিংবা পাত্র বাছাইয়ের আগে কিন্তু এই বিষয়গুলো চলে আসে। দাঁত অনেক আঁকা-বাঁকা, অসুন্দর, অনেক গেজ দাঁত, দাঁতের মাঝে অনেক অনেক ফাঁকা, সামনের দাঁতগুলো উঁচু সব মিলিয়ৈ এ যেন অন্তহীন সমস্যা। পারিবারিক বিয়ের পাশাপাশি ব্যক্তি পছন্দের বিয়েতেও এর ব্যত্যয় কিন্তু হয় না বরং ব্যক্তি পছন্দের বিয়েতে মেয়ে কিংবা ছেলে দু’তরফের বাড়িতেও এ যেন এক বাড়তি চাওয়া। কেমন মেয়ে বা কেমন ছেলে ? দাঁত কি উঁচু ? আসলে কেমন দেখায় ? ওদের বিয়ে হলে ছেলেমেয়েদের দাঁত না আবার এমন হয় ? এমন এসব প্রশ্নের তো কোনো অন্ত নেই। তাই সঠিক সময়ে প্রয়োজন দাঁতের সঠিক চিকিৎসা করা।

দুর্ঘটনার কারণে দাঁত পড়ে গেলে, তা ব্রীজ করিয়ে নিতে হবে। বর্তমানে অনেক ধরনের আধুনিক চিকিৎসা বেরিয়েছে। প্রয়োজন শুধুমাত্র সচেতনতার। তাই বিয়ের আগে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র। যার মাধ্যমে বিবাহ পরবর্তী সময়ে আপনি সেরে নিতে পারেন দাঁত ও মুখ গহ্বরের সকল জটিলতা, আর আপনার জীবনসঙ্গীকে উপহার দিতে পারেন নিরোগ, স্বাস্থ্যবান নির্মাল হাসি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেন্টাল হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। চিফ কনসালটেন্ট, ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার। মেরুল বাড্ডা প্রধান সড়ক, ঢাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!