• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সেই বাইসাইকেলটি


ফরহাদ খান, নড়াইল মার্চ ১৭, ২০১৮, ১২:২০ পিএম
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সেই বাইসাইকেলটি

নড়াইল: জ্ঞান, বিজ্ঞান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় পাঁচ হাজার বই-পুস্তক রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগারে। নেই শুধু যার স্বরণে গ্রন্থগার তার ওপর লেখা কোনো বই। এমনকি অন্য বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনীও নেই এখানে। শুধুমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ওপর লেখা একটি বই আছে। এতে হতাশ শিক্ষার্থীরা।  

এদিকে, দীর্ঘ ৪৫ বছর পর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি জাদুঘরে হস্তান্তর হলেও দর্শনার্থীরা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাইকেলটি পড়ে আছে জাদুঘরের স্টোর রুমে। গত বছর (২০১৭) ২৬ ফেব্রুয়ারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৮১তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে জাদুঘর চত্ত্বরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফের কাছে বাইসাইকেলটি হস্তান্তর করা হয়। নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মীয় নড়াইল সদরের ডৌয়াতলা গ্রামের এমদাদুল হক (২৭) সাইকেলটি ব্যবহার করে আসছিলেন। 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি

এমদাদুল হক জানান, সাইকেলটি প্রথমে তার বাবা ব্যবহার করতেন। তার বাবার মৃত্যুর পর সাইকেলটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছিলেন তিনি। নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘরে সাইকেলটি হস্তান্তর করতে পেরে আনন্দিত এমদাদুল। হস্তান্তরের পরেও নূর মোহাম্মদের ব্যবহৃত সাইকেলটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না দর্শনার্থীরা। সাইকেলটি অযন্ত অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান রজব আলী জানান, ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ গ্রন্থাগার ও জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। তবে নূর মোহাম্মদের স্মৃতিধন্য তেমন কিছু নেই এখানে। ছোট-বড় মিলিয়ে তিনটি বাটি, রান্নার কাজে ব্যবহৃত দু’টি খুনতি এবং একটি ইসলামি বই আছে। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি জাদুঘরে হস্তান্তর হলেও দর্শনার্থীদের দেখার সুযোগ নেই। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে সাইকেলটি বর্তমানে জাদুঘরের স্টোর রুমে পড়ে আছে। 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল ইসলাম জানায়, এখানে অনেক ধরণের বই থাকলেও নূর মোহাম্মদ শেখের জীবনভিত্তিক কোনো রচনা বা বই নেই। গ্রন্থাগারে এসে বিভিন্ন ধরণের বই পড়লেও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের জীবনী অজানাই থেকে যাচ্ছে। 

লাইব্রেরিয়ান রজব আলী জানান, জ্ঞান, বিজ্ঞান, পৌরনীতিসহ বিভিন্ন ধরণের পাঁচ হাজার বই-পুস্তক এই গ্রন্থাগারে স্থান পেয়েছে। তবে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ওপর লেখা কোনো বই এখানে নেই। এমনকি অন্য বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনীও এখানে নেই। শুধুমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ওপর লেখা একটি বই আছে। 

এদিকে, এক যুগের বেশি সময় ধরে বিনাবেতনে আছেন নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। কলেজটি জাতীয়করণের (সরকারি) জন্য ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলেও তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। কলেজটিতে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধাও কম। 

শিক্ষার্থী ফারজানা খানম বলেন, আমাদের কলেজের শ্রেণিকক্ষসহ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে গরমের সময়ে টিনের ঘরে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৯৯ তে প্রতিষ্ঠার পর ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভূক্ত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো এমপিওভূক্ত হয়নি। এতে পাঁচ শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে আছেন। 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রণব কান্তি অধিকারী বলেন, কলেজটি একদিকে যেমন এমপিওভূক্ত হয়নি; অন্যদিকে জাতীয়করণের বিষয়টিও আটকে আছে। জাতীয়করণের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী. শিক্ষা সচিব এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেও কাজ হয়নি। 

অন্যদিকে নূর মোহাম্মদ নগরের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন সবুর বলেন, নূর মোহাম্মদের বসতভিটায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও কোনো বেষ্টনী নেই। কয়েকটি বসার বেঞ্চ থাকলেও টাইলস উঠে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের দাবি করছি। পাশের পাইকমারি গ্রামের ইরান সরদার জানান, নূর মোহাম্মদ নগরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও তার (নূর মোহাম্মদ) বাড়িতে যাতায়াতের এক কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটির বেশির ভাগ স্থানে পিচ উঠে ভেঙ্গে গেছে। এতে দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বাড়ি অবহেলায় পড়ে আছে

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের সদস্য কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে নূর মোহাম্মদের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি প্রদর্শনের ব্যবস্থাসহ তার অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে জাদুঘরে রাখার চেষ্টা করব। জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মস্থানে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি জাতীয়করণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ ‘মহিষখোলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। নির্মাণ করা হয় নূর মোহাম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরসহ স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!