• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ছাড় দিতে প্রস্তুত জামায়াত


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮, ০৬:৪০ পিএম
বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ছাড় দিতে প্রস্তুত জামায়াত

ঢাকা : বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে প্রয়োজনে সব ধরনের ছাড় দেবে জামায়াত। এজন্য দরকার হলে তাদের বাদ দিয়েই ঐক্যপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে শরিকদের উদ্দেশে এমন মনোভাব জানিয়েছেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম।

এদিকে এ বৈঠকের শুরুতে জামায়াত ও বিজেপি বাদে শরিক অপর দলগুলোর প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয় বিএনপি। বৈঠক থেকে বের হওয়ার পর জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে।

এ বৈঠকের শুরুতেই ২০ দলীয় জোটের শরিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিএনপি নেতারা। শরিকদলগুলোর নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির যোগ দেওয়াসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসময় জোটের নেতাদের সঙ্গে আলাপ না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগও ওঠে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। এর জবাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত জোটনেতাদের অবহিত করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি নেতারা।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও শরিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, খেলাফত মজিলসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পাটির্র চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তের (একাংশ) মহিউদ্দীন ইকরাম, জমিয়তের (অপর অংশ) নূর হোসাইন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবদুর রকিব, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, জামায়াতের মাওলানা আবদুল হালিম ও বিজেপির প্রধান আন্দালিভ রহমান পার্থ ছাড়া বাকি প্রায় সব নেতা বৈঠকে বিএনপি নেতাদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরমধ্যে জোটকে অবহিত না করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপি যোগ দিচ্ছে কিনা সে প্রশ্নটি গুরুত্ব পায়।

বৈঠকে জোট নেতা সাইফুদ্দিন মনি অভিযোগের সুরে বলেন, ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়ে নতুন ঐক্যের পথে যাচ্ছে বিএনপি। বরাবরই জোটকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।

বৈঠকের পর শরিক একটি দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, অতীতে দেখা গেছে বিএনপি ঐক্য করার পর শরিকদের ভুলে গেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন জোটকে অন্ধকারে না রাখতে। বিএনপি আমাদের আজকে ডেকে জানিয়েছে, অন্ধকারে রাখা হবে না।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশ নেওয়ার ইস্যুতে কথা তোলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমও। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরসহ সবারই ছিল একই জিজ্ঞাসা।

তবে এসময় জামায়াত নেতা আবদুল হালিম ও বিজেপি নেতা আন্দালিভ রহমান পার্থ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এখন এসব নিয়ে কথা তোলা হলে আদতে সরকারের লাভ হবে। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হলে এখন জোটকে আরও সতকর্ভাবে পা ফেলতে হবে।

এদিকে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের ডাকা সমাবেশে বিএনপি ও জোটের কিছু দলের অংশগ্রহণকে নেতিবাচকভাবে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন কয়েকজন নেতা।

সৈয়দ ইব্রাহিম বৈঠকে বলেন, আমরা অনেক দিন ধরেই আছি। যারা জোটের পরীক্ষিত তাদের ভুলে যেন ঐক্য প্রক্রিয়া না করা হয়।

এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিকদের বলেছেন, আস্থা রাখার জন্য। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেই জোট করা হবে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। বৈঠকে তিনি জানান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিএনপি অংশ নিয়েছে তাদের আমন্ত্রণে। যাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, তারা গেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু করা হয়নি।

পরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকের বৈঠকে দৃশ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ঐক্যের অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, ২০ দলের সঙ্গে আলোচনা করেই তো বিএনপি আন্দোলনে গেছে। আমাদের দাবি তো অনেকের সঙ্গে মিলেছে, ম্যাডাম জিয়া তো এক বছর আগেই দাবিগুলো উপস্থাপন করেছেন।

শরিকদের প্রশ্নের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখন এগুলো নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। যখন সময় হবে বিএনপি ক্যারি করবে। ’

বৈঠকসূত্র জানায়, সম্প্রতি বিকল্প ধারার সভাপতি বি চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেন শরিকদলগুলোর নেতারা।

শরিকদলের একজন নেতা বলেন, রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে বিকল্প ধারা ভুল করেছে। এতে করে তাদেরই ক্ষতি হয়েছে।

জামায়াত ইতিবাচক : ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে ইতিবাচক ছিল জামায়াত। শরিক দলের একাধিক নেতার ভাষ্য, আগের চেয়ে জামায়াতকে অনেক পরিবর্তিত দেখা গেছে। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্য সফল করতে যে কোনও ছাড় দিতেও প্রস্তুতি আছে দলটি।

জোটের বৈঠকে দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম জোটের ঐক্য ধরে রাখার পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘ঐক্য হওয়ার জন্য জামায়াতকে না রাখলেও চলবে।’

আবদুল হালিম এও বলেছেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতনের জন্য যারা যারা কাজ করবে, তাদের ঐক্যে জামায়াতের সমর্থন আছে। যেহেতু কমন ইস্যুতে সবাই কথা বলছে, সেহেতু ঐক্য প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও ঐক্য গড়ে তুলতে মত দেন তিনি।

গত কয়েকদিন আগে জাতীয়তাবাদী ঘরানার একজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টিও আজ আলোচনায় আসে। ওই দুই নেতা সেই বুদ্ধিজীবীকে জানিয়েছেন, জামায়াত বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বাধা হবে না। জামায়াতকে বাদ দিয়েই বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়াকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য জামায়াত যে কোনও ছাড় দিতেও প্রস্তুত বলে জানানো হয় এই বুদ্ধিজীবীকে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

কর্মসূচি : জোটের বৈঠকে আগামী দিনের কমর্সূচি নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে চিন্তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির তরফে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যত কমর্সূচি নিয়ে আপনারা ভেবে জানাবেন, কী ধরনের কমর্সূচি দেওয়া যেতে পারে।

আহমদ আবদুল কাদের বলেন, কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তার ধরন নিয়ে চিন্তা করতে আমাদের বলা হয়েছে।

জানা গেছে, কমর্সূচি প্রণয়নে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে সবিস্তারে। এজন্য শরিকদলগুলোকে প্রস্তাব তৈরির জন্য বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!