• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেকারত্ব বাড়ার কারণ কর্মমুখী শিক্ষা!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১, ২০১৮, ০৩:৫৪ পিএম
বেকারত্ব বাড়ার কারণ কর্মমুখী শিক্ষা!

ঢাকা : চাকরি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার অভাবে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বেকারত্ব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে ২০১৬-১৭ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে ৮০ হাজার। তবে বিবিএসের ধর্তব্য নয়, শ্রমশক্তির বাইরে থাকা এমন বেকারের সংখ্যা আরও বেশি।

বিবিএসের হিসেবে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শ্রমশক্তির বাইরে (বেকার) ছিল ৪ কোটি ৬৬ লাখ। পরবর্তী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মানুষের (বেকারের) সংখ্যা বেড়েছে ১৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মমুখী শিক্ষার অভাব আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় এ হার বেড়েই চলেছে। বেকারত্ব কমাতে তাই বাজারমুখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, দেশে প্রকৃত কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে কর্মক্ষম কিন্তু শ্রমশক্তিতে যোগ হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৬ লাখ। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা এ বিরাট জনশক্তিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞায় বেকার বলা হচ্ছে না।

আর আইএলওর বেকার না বলার সেই একই পথে হাটছে বিবিএস। ফলে বিবিএসের হিসেবে বেকার বাড়ার হার কম হলেও বাস্তবিক অর্থে বেকারের সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্ধিত এ বেকারদের বিবিএস পরিসংখ্যানে একটু ঘুরিয়ে বলা হচ্ছে,  এরা কর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়, এরা শ্রমশক্তির বাইরে। অথচ  শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নাগরিকও বেকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আইএলওর সংজ্ঞা মেনে জরিপ করায় প্রকৃত বেকারের সংখ্যা উঠে আসছে না। এর ফলে আসল বেকারের হিসাব পাওয়া যায় না। আইএলও’র বেকারের সংজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা এ হিসাবে দেখানো হচ্ছে, দেশে বেকার সংখ্যা অনেক কম।

কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে- বেকার অনেক বেশি। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার অনেক বেড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কর্মক্ষম কিন্তু শ্রমশক্তির বাইরে তারাও প্রকৃত অর্থে বেকার। এর মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক রয়েছে, যারা কাজ করতে চান না। সেটি আলাদা কথা। তাই এক কথায় বলা যায়, দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে। এর মধ্যে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত নারী-পুরুষ আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএলও’র সংজ্ঞার মধ্যে না পড়লেও বাংলাদেশে এরাই হচ্ছে প্রকৃত বেকার। আইএলও’র সংজ্ঞায় বেকার হচ্ছে- যারা জরিপের সময় থেকে গত এক মাসের মধ্যে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। তাদেরই বেকার হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে যারা সপ্তাহে ১ ঘণ্টা কাজ করেছেন (মূল্য পরিশোধ হোক বা না হোক) তারা কর্মে নিয়োজিত হিসেবে ধরা হয়েছে।

এছাড়া যারা এক মাসের মধ্যে কোনো কাজ খোঁজেননি তারা শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএলও বেকারের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে আছেন দুই কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পে এক কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতে যুক্ত দুই কোটি ৩৭ লাখ মানুষ। কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজারের মধ্যে নারীর সংখ্যা তিন কোটি ৬৩ লাখ ৩৩ হাজার এবং পুরুষ এক কোটি ১৯ লাখ ৪৭ হাজার।

বিবিএস জরিপ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলএমআইএস প্রকল্পের পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমশক্তির বাইরে থাকা ১৫ বছর বয়সের ওপরের এই মানুষগুলোর মধ্যে গৃহিণীদের একটি অংশ আছে। একটি অংশ আছে যারা বর্তমানে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের সঙ্গেও এরা যুক্ত নয়। কিংবা কোথাও কোনো কাজও এরা করছে না। এই অংশকে শ্রমবাজারে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করে বিবিএস।

তিনি বলেন, আইএলওর সংজ্ঞানুযায়ী এরা বাংলাদেশে বেকার হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে না। আবার কাজ করছে এ ধরনের পরিসংখ্যানের সঙ্গেও যুক্ত হচ্ছে না। এদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শ্রমশক্তির বাইরে (বেকার) ছিল ৪ কোটি ৬৬ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। বাকি ১৫ লাখ থাকে বেকার। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তারাও রয়েছেন। প্রতি বছর এই ১৫ লাখ শ্রমশক্তি বেকারের সংখ্যা শুধু বাড়িয়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়াসহ তিন কারণে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমন্বয় নেই। অর্থাৎ যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না।

ফলে এই প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন ভূমিকা রাখছে না। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়া এবং সরকারি বিনিয়োগের কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!