• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সিলেট সিটি নির্বাচন

বেকায়দায় আরিফ সুবিধায় কামরান


সিলেট ব্যুারো জুন ৩০, ২০১৮, ০১:০৫ পিএম
বেকায়দায় আরিফ সুবিধায় কামরান

সিলেট : নানা নাটকীয়তার পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত করেও স্বস্তিতে নেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পেলেও দল ও জোটের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিপাকে সিসিকের সদ্যবিদায়ী এ মেয়র। এবারের সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট বিএনপির প্রভাবশালী নেতা বদরুজ্জামান সেলিম।

এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও মেয়র পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটুট রয়েছেন। সব মিলিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন সিসিক নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

সিসিক নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত আরিফুল হক চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামিম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তাই ভোটযুদ্ধে নামার আগে দল আর জোটের বিদ্রোহ ঠেকাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে আরিফকে।

সিসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দলবিচ্ছিন্নতা ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের। এ নিয়ে চলে ঢাকা-লন্ডন-সিলেট টানাটানি। নানা কৌশলেও এ বিদ্রোহ দমন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় বিএনপি।

দলের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন আরিফের সঙ্গে ভিড়লেও বিদ্রোহ করেছেন সেলিম। সিসিক নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সাক্ষী, দলবিচ্ছিন্ন কেউ নির্বাচনে জয় পান না। তাই তৃণমূলের দাবি বুঝেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

আরিফকে ইঙ্গিত করে সেলিম বলেন, ‘বিএনপি যাকে দলীয়ভাবে বেছে নিয়েছে তিনি একজন স্বার্থপর ও পলাতক। বিপদের সময় দলকে তিনি বারবার ফেলে পালিয়েছেন। আবার সুবিধার সময় দলের ভেতর অবস্থান নিয়েছেন। আমি এবং স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা লন্ডন এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে এ কথাই তুলে ধরেছি। তারপরও এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মতো আমিও ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। আমি দলের প্রতি অনুগত; কিন্তু তৃণমূলের রাজনীতি করি বলে তাদের দাবিতেই প্রার্থী হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি ভুল করেছে। আমি বিশ্বাস করি, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ব্যালেটের মাধ্যমে বিএনপির এ ভুল সিদ্ধান্তের জবাব দেবে।’ দলের সিলেটের তৃণমূলের সিংহভাগ নেতাকর্মী আরিফুলের সঙ্গে নেই বলেও দাবি করেছেন সেলিম।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। এর নেতাকর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে। তবে ধানের শীষের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ফলে এসব ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।’

এদিকে ২০ দল থেকে প্রার্থী না দিয়ে বিএনপি তিন সিটি; রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি মানতে পারছে না জামায়াতে ইসলামী। তাই সিলেট সিটিতে প্রার্থী দিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করেছে দলটি। জামায়াত দৃঢ়ভাবেই জানিয়েছে সিলেট থেকে কোনোভাবেই তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে না। এ জন্য সিলেট নগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিএনপি বাদে ২০ দলের শরিক অন্যান্য দলের অধিকাংশই জামায়াতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বলেও দলটির নেতারা দাবি করেছেন। বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলের এ বিরোধ আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুবিধা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আগামী ৩০ জুলাই এ সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ২৭টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৭ এবং ৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের জন্য ৬৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!