• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি খাতে বেশি বিদেশি ঋণ, শঙ্কিত দেশীয় ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১০, ২০১৬, ১২:১৩ পিএম
বেসরকারি খাতে বেশি বিদেশি ঋণ, শঙ্কিত দেশীয় ব্যাংক

দেশীয় ব্যাংকের সুদহার কমলেও বেসরকারি খাতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কোনো রফতানি নেই শুধুমাত্র আমদানি করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ওই ধরনের ঋণ পাচ্ছে। স্বল্প সুদের ইউপাস এলসি (দেরিতে পরিশোধের শর্তে) খুলে অনেক প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্য আমদানি করছে। ফলে একদিকে যেমন দেশীয় ব্যাংকগুলোর আয় কমছে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপরওতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বাড়ছে। তবে বেশি বাড়ছে বায়ার্স ক্রেডিট নামের স্বল্প মেয়াদি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী গত জুন শেষে বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ কোটি ডলার। তার আগে গত মে মাসে প্রথমবারের মতো ওই ঋণ চারশ’ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে।

মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কিছুটা সমাধানসহ বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগ বাড়ায় বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বাড়ছে। কিন্তু ওই ঋণের অপব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। রফতানিমুখী শিল্পে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ইউপাস এলসির বিপরীতে এক বছরের কম মেয়াদি বিদেশী ঋণ সুবিধা নিয়ে থাকেন। 

আমদানির জন্য দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে এখনো ৯ থেকে ১২ শতাংশ সুদ গুনতে হয়। অথচ বায়ার্স ক্রেডিটের সুদহার ৬ শতাংশের নিচে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে কম সুদেও ওই বিদেশি ঋণ নিয়ে ভিন্ন খাতে ব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে। ওই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশী ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতায় বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া কমমে এসেছে। গত জুন শেষে বকেয়া কমে এক কোটি ২ লাখ ডলারে নেমে  আসে। আগের বছরের জুন শেষে যা ছিল দুই কোটি ৭১ লাখ ডলার। ওই সময়ে ঋণ স্থিতি ছিল ৩৭৪ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতের এবি, ন্যাশনাল ও আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের কিছু ঋণ যথাসময়ে আদায় না হওয়ায় বকেয়া বেড়ে গিয়েছিল। 

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতায় বকেয়া ঋণের বড় অংশই আদায় হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যদিও গত ছয় বছরে বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের প্রায় ৭শ’ কোটি ডলারের দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি বিদেশি ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। তবে  বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ অনুমোদন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম থাকায় দেশীয় ব্যাংকের ঋণের সুদহার গত কয়েক বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। 

গত জুন শেষে ব্যাংকগুলো গড়ে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের জুন শেষে ছিল ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তার আগের বছরের একই মাসে যা ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল। তাছাড়া ভালো গ্রাহক হিসেবে পরিচিত উদ্যোক্তারা এখন এক অঙ্ক সুদে ঋণ পাচ্ছেন। এই সময়ে বিদেশি ঋণের লাগাম টানা দরকার বলে অনেকেই মনে করছেন।

সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি খাতে স্থানীয় উৎস থেকেও ধারাবাহিকভাবে ঋণ বেড়ে গত জুন শেষে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। ঋণ বৃদ্ধির এই হার গত চার অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাছাড়া গত অর্থবছরে সার্বিকভাবে এলসি নিষ্পত্তির হার ৪ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।

এদিকে বিদেশী ঋণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন- দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে ঋণ সুদহার কিছুটা কমলেও এখনো বাইরের তুলনায় বেশি রয়েছে। ওই কারণে অনেকেই বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ নিচ্ছেন। তবে ওসব ঋণের পুরোটাই বিনিয়োগে যাচ্ছে না। বরং বিদেশি ঋণ নিয়ে অনেকেই আগের ঋণ পরিশোধ বা অন্য খাতে ব্যবহার করছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল জানান, বিনিয়োগ চাহিদার কারণেই বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কম সুদের ঋণ নিচ্ছেন। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্যই বায়ার্স ক্রেডিট দেয়া হয়। সাম্প্রতিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। ফলে ওই ঋণ সঠিক খাতেই ব্যবহার হচ্ছে। অর্থনীতির জন্য যা ইতিবাচক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম
 

Wordbridge School
Link copied!