• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি ব্যাংকে ছিল ছাঁটাই আতঙ্ক


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০৩:৩৮ পিএম
বেসরকারি ব্যাংকে ছিল ছাঁটাই আতঙ্ক

ঢাকা : দেশের ব্যাংকিং খাতে বিদায়ী বছর ২০১৭ সালে ছাটাই আতঙ্ক শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তানের মধ্যে দিয়ে। ব্যাংকটিতে নতুন নেতৃত্ব আসায় শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে সকল স্তরে চাকরি হারানোর ভয় শুরু করে। তবে, ব্যাপক আলোচনার পরে শীর্ষ পদে বেশ রদবদল হলেও কর্মকর্তাদের মধ্যে তা ছড়ায়নি।

ইসলামী ব্যাংকের পরেই ছাঁটাই আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে এনসিসি ও ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে। বাদ যায়নি নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ও এনআরবি ব্যাংক। গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার হওয়ায় গণহারে ছাটাই না হলেও পুরো বছরেই দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ছাঁটাই কার্যক্রম চলে। ছাটাই করতে কখনো পরীক্ষা কখনো বদলীর কলা-কৌশলের আশ্রয় নেয় ব্যাংকের নেতৃত্বে থাকা লোকজন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত দেশের ব্যাংকখাত নিয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠান বিআআবিএম এর এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্যাংকিং খাতে ছাঁটাইয়ের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে দুটি ঘটনা ব্যাংকপাড়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি ব্যাংকের চাকরিচ্যুত একজন কর্মকর্তা পাগল হয়ে গেছেন। আরেকটা ব্যাংকের একজন হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

মূলত, বিশেষ ব্যবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংক এবং অক্টোবরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে একধরনের পরিবর্তন আতঙ্ক বিরাজ ছিল বছর জুড়েই। চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটি ২০১৭সালেই এ দুটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের শেয়ার কিনে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় গ্রুপটি। তাতেও ব্যাংকটির উন্নতি হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৩৪ শতাংশই খেলাপি। জানুয়ারিতে বড় পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রুপটির হাতে যাওয়ার পর ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। কমে গেছে আয় ও আমানতের প্রবৃদ্ধি।

সর্বশেষ প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফাও কম দিয়েছে। শীর্ষ পদে পরিবর্তনের পরে ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। আমানত কমেছে বছর শেষে।

একের পর এক ব্যাংক দখল করেই শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনে গ্রুপটি। নতুন ব্যবহস্থাপনা গিয়েই ব্যাংকের অভ্যন্তরে নানা পরিবর্তন নিয়ে আসেন। বদলী, চাকরুচ্যুতি ছিল নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। ফলে সাত ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের পুরো ব্যাংক পাড়ায় ছাটাই আতঙ্ক বিরাজ করে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকে ছাটাই আতঙ্ক বন্ধ হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পরে। গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হলে এমন উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে এই গ্রুপটির অধীনে চলে গিয়েছে সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গ্রুপটি ব্যাংক থেকে ঋণে নিয়ে, সেই ঋণের টাকায় আরেক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। একটি ব্যাংক গ্রুপটির একটি সম্পদও ঋণখেলাপীর দায়ে বিক্রি করেছে। যে গ্রুপের সম্পদ দেনা পরিশোধে ব্যাংক বিক্রি করে, সেই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকখাত চলে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়।

আগের মালিকদের সরিয়ে নতুন মালিকদের স্থান দখল হওয়া ব্যাংকগুলোতে পুরো বছরজুড়ে হয়েছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা। কখন কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নতুন পরিবর্তন আসে, সেই আতঙ্কে দিন কেটেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

ফলে অস্থির একটা সময় কেটেছে ব্যাংকারদের মাঝে। এই শঙ্কার মধ্যেই ব্যাংকিং জগতে নতুন আসা অনেকেই বিকল্প চাকরি ও অন্যখাতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। কেউ পরিকল্পনা করছে, আপাততো চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা বা এলাকায় কিছু করা। সমস্যা হলেই চাকরি ছেড়ে দিবেন। যাদের বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার বয়স আছে, তারাও একসময়ে মনে করেছিলেন ব্যাংকিং জগতে থাকবেন। তারাও সিদ্ধান্ত বদলানোর চিন্তা শুরু করেছেন।

নীবনদের মতে, এভাবে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা চললে এক সময়ে দেখা যাবে মেধাবীরা আর এ খাতে আসবে না। দুর্নীতিবাজদের আখাড়ায় পরিণত হবে। আর ব্যাংক খাত লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় বলে চিহ্ণিত হবে। ফলে দুর্নাম হবে অর্থনীতির, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের নেতিবাচক প্রচারণা হবে। এতে করে অনেক দেশের ব্যাংকেই সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চাইবে না।

সুনাম ক্ষুন্ন হবে দেশের। বিদেশি ব্যাংকগুলো সরাসরি আমাদের সঙ্গে কাজ না করলে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। যার প্রভাব বাজারের পণ্যে বলে উল্লেখ করেন এক প্রবীণ ব্যাংকার।

এ বিষয়ে তিনিসহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সমস্যা কাটিয়ে ব্যাংকার মনে আস্থা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককেই বিষয়টিতে নজর দিতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!