• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
এবিবির উদ্বেগ

বেড়ে যেতে পারে ঋণের সুদ হার


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানুয়ারি ২০, ২০১৮, ০১:১৮ পিএম
বেড়ে যেতে পারে ঋণের সুদ হার

ঢাকা : বিধির বেড়াজালে অব্যবহৃত থাকছে ব্যাংক খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা। সব তফসিলি ব্যাংকে অর্থ আটকে থাকবে। এই টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে না ব্যাংক। এই অর্থের বিপরীতে আমানতকারীদের সুদ দিতে হবে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডি রেশিও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। তবে সেখানে এডি রেশিও পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। বর্তমানে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। আর ইসলামি ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারে শতকরা ৯০ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর জন্য বিনিয়োগযোগ্য অর্থ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য এই হার হবে ৮৮ শতাংশ।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) হিসাব বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এডি রেশিও পুনর্নির্ধারণ করলে ব্যাংকগুলোর ২৫ হাজার কোটি টাকা আটকে যাবে। সাধারণ আমানতকারীদের কাছ থেকে সুদে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারলে তার লোকসান গুনতে হবে তাদের।

সূত্র জানিয়েছে, এবিবি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত সোমবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা আমাদের বিনিয়োগ করার সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। আমরা তাই গভর্নর মহোদয়কে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। আশা করি তিনি এটি বিবেচনায় নেবেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত এমনিতেই নানা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে। তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আমাদের আরো সঙ্কটে ফেলবে।      

জানা গেছে, গত মুদ্রানীতিতে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সর্বশেষ হিসাবে তা ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, সরকারের ঘোষিত জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা ঋণ প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ঋণে লাগাম টানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্যদিকে, বছরজুড়ে বেশ কিছু ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে। আমানত প্রবৃদ্ধির তুলনায় ঋণ বিতরণ বেশি করেছে ব্যাংকগুলো। ফলে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে সৃষ্টি হয়েছে তারল্য বা নগদ টাকার সঙ্কট। কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার ওপরে যাওয়ায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে দুটি ব্যাংকের চলতি হিসাবের অর্থ আটকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ (এসএলআর) বাদ দিয়ে এ হার নির্ধারণ করা হবে।

সর্বশেষ হিসাবে গত অক্টোবরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে ৮৪ দশমিক ৬৯ শতাংশে। আর ইসলামি ব্যাংকগুলোতে এ অনুপাত ৮৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ প্রবাহে লাগাম টানা হলে ঋণের সুদ হার আবার বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ সুদে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে চাইবেন না। ফলে বাধাগ্রস্ত হবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এ প্রতিবেদককে বলেন, এবিবির চিঠি আমরা পেয়েছি। সেটি পর্যালোচনা করা হবে। তবে সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোভাবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!