• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে লোডশেডিং, তীব্র গরমে জনদুর্ভোগ


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ১১, ২০১৬, ১২:৫৫ পিএম
বেড়েছে লোডশেডিং, তীব্র গরমে জনদুর্ভোগ

রাজধানীসহ সারা দেশে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সরবরাহ পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকায় শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল ও গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ থাকায় এবং কয়েকটি কেন্দ্রের সক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার দুর্বলতাও বিদ্যুৎবিভ্রাটের জন্য দায়ী। রাজধানীতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও মফস্বল শহর ও গ্রামে লোডশেডিং কমেনি।

গত তিন-চার বছরে বিদ্যুতের দাম কয়েক গুণ বাড়লেও অন্তত শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের সরবরাহ বেশ ভালো থাকায় নাগরিক জীবনে স্বস্তি ছিল। কিন্তু ফের সেই পুরোনো দুর্ভোগ ফিরে এসেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি সংকটে বর্তমানে ১৮টি কেন্দ্রের এক হাজার ২২৮ মেগাওয়াট উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে তেল সংকটে ৩৯০ মেগাওয়াট বসে আছে। বন্ধ রয়েছে ফার্নেস অয়েলচালিত নোয়াপাড়া কেন্দ্রে ৪০ মেগাওয়াট, হরিপুর এনইপিসির ৯৭ মেগাওয়াট ও ডিজেলচালিত মেঘনাঘাট কেন্দ্রে ১০৫ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জের কুইক রেন্টালের ৯৮ মেগাওয়াট ও পাগলায় ৫০ মেগাওয়াট।

গ্যাসের ঘাটতির কারণে বহু কেন্দ্রে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-ভোলা কেন্দ্রে ১০১ মেগাওয়াট, হরিপুর পাওয়ারের ১৯ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ কেন্দ্র ৪০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ কেন্দ্র ১৫০ মেগাওয়াট, টঙ্গী কেন্দ্রে ১০৫ মেগাওয়াট, শিকলবাহায় দুই কেন্দ্রে ৯০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দুই ইউনিটে ১৯০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জের তিন কেন্দ্রে ১০৬ মেগাওয়াট, চাঁদপুর কেন্দ্রে ১১৩ মেগাওয়াট ও সিলেট কেন্দ্রে ২৫ মেগাওয়াট। পানির অভাবে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

পিডিবি জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যাসের প্রয়োজন ১৩০ কোটি ঘনফুট। পিডিবি পাচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুট। এ ছাড়া সংরক্ষণ, মেরামত ও অন্যান্য কারণে দুই হাজার ৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পিডিবি বলছে, এ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্রুত চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎপাদন বেশ কিছুটা বাড়বে।

এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেই টানা এক থেকে আড়াই ঘন্টার লোডশেডিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক ধরে এই দুই কোম্পানির দৈনিক লোডশেডিং প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরো নাজুক। অনেক স্থানে টানা ছয় ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) লোডশেডিংয়ের পরিমান ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সঞ্চালনব্যবস্থার ত্রুটির কারণে আরো অন্তত ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। অথচ বর্তমানে আরইবির দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা ৪ হাজার মেগাওয়াটেরও কিছু বেশি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু কয়েক দিন ধরে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তাই রেশনিং করে এক এলাকায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে অন্য এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ার কারণ তিনটি। 

এগুলো হলো- সম্প্রতি গ্যাস না পাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। নৌযানশ্রমিক ও মালিকদের ধর্মঘটের কারণে ফার্নেস তেল না পাওয়ায় অনেকগুলো তেলভিত্তিক কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ১০-১২টির উৎপাদন কয়েকগুণ কমে গেছে। গত সোমবার মালিকদের ধর্মঘট শেষ হলেও তেল সরবরাহ পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আর অতি গরমের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এবং সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তবে অপর একটি সূত্র বলছে, বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতির ব্যবধান আরো বেশি। কর্তৃপক্ষ কাগজে কলমে ঘাটতি কম দেখাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!