• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ব্যবহার কঠোর জবাবদিহিতার উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬, ০৬:৫৯ পিএম
বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ব্যবহার কঠোর জবাবদিহিতার উদ্যোগ

সরকার বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ব্যবহার কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) যাতে বৈদেশিক অর্থ এনে উন্নয়নের নামে ভিন্ন খাতে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কড়াকড়ি করা হচ্ছে।

একইভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকেও জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা, আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন, জলবায়ু তহবিল, বাণিজ্যের জন্য সহায়তা ইত্যাদি সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি সহায়তাপুষ্ট কোনো প্রকল্পের ব্যয় ৩০ কোটি টাকার বেশি হলেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। আর স্থানীয় বিশেষজ্ঞ দিয়েই সমীক্ষাটি করতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সমীক্ষার কাজে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা যাবে না।
সমীক্ষার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কারিগরি সহায়তাও যথাসম্ভব নিরুৎসাহিত করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। তার বাইরে এনজিওগুলো কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে আসে।

গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরির্বতনের অভিঘাত মোকাবেলায় বৈদেশিক সাহায্যের একটি বড় অংশ দেশে আসছে। কিন্তু ওসব অর্থব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক এনজিও উন্নয়নের নামে আনা বৈদেশিক অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যয় করছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রাধিকারকে অনেকাংশেই বিবেচনায় না নিয়ে ভিন্ন খাতে ওই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এমন অভিযোগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। আর ইআরডির কাছে হিসাব না থাকায় সরকার প্রকৃত তথ্যও জানতে পারছে না। মূলত অর্থ ব্যবহারে শৃঙ্খলা ফেরাতেই নতুন বৈদেশিক সাহায্য নীতিমালায় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত অর্থায়নের বিষয় নজরদারিতে আনা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বৈদেশিক সাহায্যের অপব্যয় রোধ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করছে। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অংশীজনদের মতামতও নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কর্মবণ্টন-সংক্রান্ত বিধান অনুসারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ওই নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রধান সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আর নীতিমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য শিগগির মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। আর খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে- জলবায়ু পরির্বতন-সংক্রান্ত বাজেটভুক্ত ও বাজেটবহির্ভূত ব্যয়ের বিস্তারিত ইআরডিতে সরবরাহ করতে হবে। তাতে পরিকল্পিতভাবে ও স্বচ্ছতার সাথেখ জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তাছাড়া দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও বিশেষায়িত অন্য যে কোনো উৎস থেকে ঋণ এবং অনুদান আনার আলাপ-আলোচনার দায়িত্বও পুরোপুরি ইআরডির ওপর থাকবে। তবে কঠিন শর্তের যে কোনো ঋণই স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন কর্তৃক অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। ওই কমিটির নেতৃত্বে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সূত্র আরো জানায়, সরকারের জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়- স্থানীয় পর্যায়ে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প/কর্মসূচি তদারকির জন্য জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে। কমিটি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। আর ওই সংক্রান্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং ইআরডির কাছে পাঠাবে।

তাছাড়া বৈদেশিক ঋণের স্বচ্ছতা আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের বৈদেশিক সহায়তার অঙ্গীকার এবং অর্থ ছাড়-সংক্রান্ত তথ্যও সরকারের এইড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (এইমস) প্রদান করতে হবে। তার ফলে ইআরডি বৈদেশিক সহায়তার পরিকল্পিত ও প্রকৃত অর্থ ছাড়ের পরিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকবে। সেই সাথে ওই তথ্য সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্য সম্পদ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে।

এদিকে বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় এনজিও সম্পর্কে বলা হয়- এনজিও এবং সমধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রাধিকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা এনজিওগুলোকে সহায়তা দিলে তার তথ্য তথা প্রতিশ্রুতি ও প্রকৃত ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ এইমসের মাধ্যমে ইআরডির কাছে পেশ করতে হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। ঋণ ও অনুদান দুটিই ইআরডির মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিজেরা যোগাযোগ করছে। তার ফলে অনিয়মের ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনি বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়েছে। ঋণের হিসাবের মধ্যেও গরমিল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিদেশি সহযোগিতা এলেও তার কোনো নীতিমালা নেই।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!