• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বোমার উৎপত্তি চীনে


ফিচার ডেস্ক মার্চ ৩০, ২০১৭, ০৭:৩৪ পিএম
বোমার উৎপত্তি চীনে

ঢাকা: বোমা শব্দটি বাংলাদেশে এখন অতি চেনা। বিস্ফোরণের শব্দও সহ্য হয়ে গেছে অনেকের। একাত্তরের ‍মুক্তিযুদ্ধে এদেশে সবচেয়ে বেশি বোমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর আর ওতোট হয়নি সত্য, তবে থেমেও যায়নি। অপরাজনীতির হাত ধরে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কারণে বোমার ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে বছর দুয়েক আগে সারাদেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। এসময় যত্রতত্র বোমা বিস্ফোরণ হতে থাকে।

তবে সবকিছুকে হার মানিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। বিশেষ এক সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। নিজের শরীরকেই বোম হিসেবে তারা ব্যবহার করছে। এই বোম যে কতটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দেয় তা যে কেউ উপলব্ধি করতে পারেন।    

বোমা কী
বাংলায় বোমা। ইংরেজিতে Bomb. গ্রীক শব্দ বোম্বাস (βόμβος) থেকে বোমা শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে। যা ইংরেজি বুম শব্দের মাধ্যমে একই অর্থ বহন করে। এটা ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিস্ফোরক ও অস্ত্রবিশেষ। খুব দ্রুতবেগে অভ্যন্তরীণ শক্তির রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বোমা বড় ধরনের কম্পন তরঙ্গের সৃষ্টি করে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

সচরাচর বোমায় বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ রাখার উপযোগী পাত্রে পরিপূর্ণ থাকে। এটি ধ্বংসাত্মক জিনিস দিয়ে নকশা অনুসারে বসানো হয় কিংবা নিক্ষেপণ করা হয়।

ব্যবহার
কয়েক শতাব্দী ধরেই সারাবেশ্ব এর ব্যবহার হয়ে আসছে। অধিকাংশ বোমাই সাধারণ জ্বালানির তুলনায় কম শক্তি সঞ্চিত করে। শুধু ব্যতিক্রম পারমাণবিক বোমা। প্রায়শই প্রতিপক্ষীয় শত্রুবাহিনীর লক্ষ্যস্থলে বোমাবর্ষণ করে সামরিক বাহিনী। এছাড়াও সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে আত্মঘাতী বোমা হামলা পরিচালনা করে। অবশ্য, শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খনির উৎসস্থল নিরূপণে বোমার ব্যবহার অনেক।

ভয়ঙ্কর শক্তিশালী বোমা

ইতিহাস
চীনে প্রথম ১২২১ সালে বিস্ফোরক বোমা ব্যবহার দেখা যায়। গান রাজবংশের বিরুদ্ধে জিন রাজবংশের সেনাবাহিনী প্রথম এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এগার শতকে চীনে বাঁশ টিউব বোমার ব্যবহার দেখা গেছে। তের শতকে বিস্ফোরক বারুদে ভরা ঢালাই লোহার শাঁস দিয়ে তৈরি বোমার ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ১২৩১ সালে জিন বংশধরদের আমলে (১১১৫-১২৩৪) মঙ্গলদের বিরুদ্ধে নৌযুদ্ধে এই বোমার প্রচলন হয়।

ক্ষয়ক্ষতি
যারা আত্মরক্ষার উপকরণ ছাড়াই বোমা বিস্ফোরণের কাছাকাছি অবস্থান করেন তারা চার ধরনের বিস্ফোরণ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। সেই প্রতিক্রিয়া হলো- কম্পনজনিত উচ্চচাপ, খণ্ড-বিখণ্ড, সংঘর্ষ এবং উচ্চতাপ। তবে বোমা নিরোধক ব্যক্তি, সৈনিকদের শারীরিকভাবে আত্মরক্ষার উপকরণ পরলে ঘটনাস্থল গেলে তেমন প্রভাব পড়ে না।

বলা প্রাসঙ্গিক, বোমা বিস্ফোরণের উচ্চচাপে আকস্মিক ও অতি তীব্র পরিবেষ্টিত চাপে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতিসহ স্থায়ী ক্ষতি কিংবা মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। পাশাপাশি বিস্ফোরণস্থলের ভূমিতে বিরাট গর্ত, ধ্বংসস্তূপ কিংবা গাছপালা উৎপাটনও হয়ে যায়। পানির নিচে কিংবা সমুদ্রের উপরে মাইন বিস্ফোরণে একটা মানবতাবিরোধী ঘটনা।

কম্পন
বিস্ফোরকের কম্পন তরঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় শরীরের অঙ্গচ্যূতির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আক্রমণের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে শূন্যে নিক্ষিপ্ত করারও সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও অঙ্গচ্ছেদ, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। ধণাত্মক ও ঋণাত্মক তরঙ্গ দিয়ে গড়া বিস্ফোরক উপাদানের সাহায্যে কম্পন তরঙ্গ তৈরি হয়। তরঙ্গের উৎসস্থলে অর্থাৎ বিস্ফোরণ স্থলে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে।

টাইমবোমা

দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এক জনসভায় বক্তব্য দেয়ার সময় গ্রেনেডের মাধ্যমে সৃষ্ট বোমা হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তার কানের পর্দা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওকলেহোমা সিটিতে বোমা বিস্ফোরণে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চার হাজার পাউন্ড উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়েছিল।

বোমা তৈরির উপাদান
বিস্ফোরক বা বিস্ফোরক পদার্থ হচ্ছে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম, এমন এক ধরনের পদার্থ। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার শক্তি সঞ্চিত থাকে, যা বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। হঠাৎ করে খুবই অল্প সময়ের মাঝে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ শক্তি প্রকাশ পায়। যা আলো, তাপ, শব্দ এবং চাপ শক্তি আকারে প্রকাশ পায়।

বিস্ফোরক পদার্থে সঞ্চিত শক্তি হতে পারে রাসায়নিক শক্তি। যেমন: নাইট্রোগ্লিসারিন। চাপশক্তি অর্থাৎ, উচ্চচাপে রাখা গ্যাস, যেমন: গ্যাস সিলিন্ডার বা অ্যারোসলের ক্যান। পারমাণবিক শক্তি অর্থাৎ, নিউক্লীয় বিস্ফোরণ, যেমন: ইউরেনিয়াম-২৩৫ ও প্লুটোনিয়াম-২৩৯-এর ফিশনযোগ্য আইসোটপ।

ককটেল বোমা

বিস্ফোরণের গতিবেগ দ্বারা বিস্ফোরক দ্রব্যের শ্রেণীবিভাগ করা যেতে পারে। যেসব বিস্ফোরক শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে বিস্ফোরিত হতে সক্ষম সেগুলোকে উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক বলা হয়। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্যের স্পর্শকাতরতা দিয়েও বিস্ফোরকের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। এখানে নির্ণয় করা হয় কতো কম চাপে বা তাপে একটি পদার্থ বিস্ফোরিত হয়। যেসব বিস্ফোরক অল্প তাপ বা চাপে বিস্ফোরিত হয় তারা প্রাথমিক বিস্ফোরক বা প্রাইমারি এক্সপ্লোসিভ নামে পরিচিত। অপরদিকে তূলনামূলক ভাবে বেশি তাপ বা চাপে বিস্ফোরিত বিস্ফোরকগুলো সেকেন্ডারি এক্সপ্লোসিভ বা মাধ্যমিক বিস্ফোরক নামে পরিচিত।

সোনালীনিউজডটকম/এন

Wordbridge School
Link copied!