• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ছে না


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১০, ২০১৮, ১১:২২ পিএম
ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ছে না

ঢাকা : আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) এনবিআর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়িয়ে যদি সামান্য আয়কর ধরা হয় তাহলে জনগণ সেটা দেবে। সীমা না বাড়িয়ে কিছুটা ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আলোচনায় অংশ নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোর বিষয়ে মত দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থার প্রেক্ষিতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত হবে না। যে পরিমাণ রয়েছে সেটিই বহাল রাখা উচিত। তাহলে করের আওতা বাড়বে। এরই প্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন। যদিও প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ব্যক্তিগত আয়ের করমুক্ত সীমা আড়াই লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে চার লাখ টাকা, নারী ও ৬৫ বছরের তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আয়করমুক্ত সীমা ৩ লাখ টাকা। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রফতানির জন্য বর্তমানে যেসব প্রণোদনা রয়েছে আগামী বাজেটে সেগুলো অব্যাহত থাকবে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য খাতেও রফতানি বৃদ্ধিতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কিছু প্রণোদনা রয়েছে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটিকে আরো আকর্ষণীয় করতে এবং কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস (উচ্চহারের ব্যবসায়ের খরচ) কমানোর জন্য বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) সেল কাজ করছে। আমরাও সহযোগিতা করব। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যেসব চুক্তি রয়েছে সেগুলো আমাদের মানতে হবে।

অনলাইন ভ্যাট ব্যবস্থার জন্য আগামী এক বছরের মধ্যে ইসিআর চালু করা হবে বলে জানিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, অটোমেশন আমাদের করতেই হবে। এটা না করা গেলে কর আদায় করা সম্ভব হবে না এবং যারা কর দিচ্ছে না তাদেরকে ধরতে পারব না। করপোরেট করহার কমানোর বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটা কমানোর জন্য আমাদের কাছে সবাই দাবি জানিয়ে আসছে।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে কোম্পানিগুলোর করের পরিমাণ কমানো হবে। তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে বিড়ি ও সিগারেটের মধ্যে পার্থক্য বেশি থাকবে না। বিড়ির ওপর কর কমানোর কারণে শুধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।

দেশি শিল্প সুরক্ষার আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অধিকহারে শুল্ক আরোপের বিষয়টি কমিয়ে আনা হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে ওঠার জন্য আমরা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। যেসব শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, দেশীয় খাদ্য, এনার্জি ড্রিঙ্ক এগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাজেটের পর ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এর মাধ্যমে অর্থপাচারের বিষয়টিও জড়িত থাকে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদ-ই সাত্তার বলেন, রফতানির জন্য যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে সেটার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষার নামে আমদানির ওপর অধিকহারে শুল্ক আরোপও পরোক্ষভাবে রফতানি প্রণোদনা। এতে পরোক্ষভাবে দেশের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার রফতানির বাজারের তুলনায় অনেক ছোট। এজন্য আমাদের শিল্পের বিকাশ ও সম্প্রসারণের জন্য রফতানিকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করপোরেট করহার অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। প্রতিবছর ২ শতাংশ করে কমিয়ে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা হলে সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ তৈরি হবে না।

কর আরোপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে বৈষম্য না রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, টেলিকম খাতে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর রয়েছে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ভ্যাট আদায়ে একটি অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু ভ্যাট আইন স্থগিত করে দেওয়ার কারণে এতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দেন তিনি। সিগারেট ও বিড়ির ব্যবহার কমানোর জন্য উচ্চহারে কর আরোপের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এটাই অনুসরণ করা হচ্ছে। বিড়ির ওপর কম শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত যাতে বিড়ি থেকে সিগারেটের দিকে যায় কিন্তু সিগারেট থেকে বিড়ির দিকে না যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!