• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাল্যবিয়ে রোধে আইনের খসড়া

ব্যতিক্রমকে আইনসিদ্ধ করা ঠিক হবে না


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৯:৫০ এএম
ব্যতিক্রমকে আইনসিদ্ধ করা ঠিক হবে না

আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অন্য অনেক সূচকের মতো নারীর ক্ষমতায়নেও বেশ অনেকটাই এগিয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও সার্বিক বিবেচনায় এই এগিয়ে থাকাটা গুণগত দিক থেকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছতে পারছে না। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আমাদের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে। 

সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিক্ষার হার বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতির হার তেমন একটি সন্তোষজনক নয়। এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ বাল্যবিয়ে। দেশে বাল্যবিয়ে  প্রতিরোধে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সমস্যা। দারিদ্র্য, অশিক্ষা প্রভৃতি কারণে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অনেক কন্যাশিশুর। এই প্রবণতা ঠেকাতে প্রচলিত আইন সংস্কার করে সম্প্রতি ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন, ২০১৬-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। যাতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরই রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে অপরাধের আওতা ও সাজার পরিমাণ। তবে আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে- বিশেষ ক্ষেত্রে ‘সর্বোত্তম স্বার্থে’ আদালতের নির্দেশে এবং বাবা-মায়ের সম্মতিতে যে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হতে পারবে এবং আইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিধি তৈরি করবে, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে  এক ধরনের অস্পষ্টতা। তাই এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান হচ্ছে- ব্যতিক্রমকে যদি আইনসিদ্ধ করা হয়, তাহলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে বৈ কমবে না। কারণ প্রথম কথা- ১৮-এর নিচে কত বছর বয়সে বিয়ে হতে পারবে, আইনের খসড়াটিতে তা নির্দিষ্ট করে বলা নেই। দ্বিতীয় কথা- আদালতের নির্দেশ কিংবা বাবা-মায়ের সম্মতি, যে সুযোগেই হোক, ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ের বিধান থাকলে সেই বিধানের অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে। জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রীরা এরই মধ্যে বলেছেন- তারা মনে করেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনটির ফাঁক গলে বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে। এ ধারণা অমূলক নয়; ১৮ যদি অনমনীয় সংখ্যা না হয়, তাহলে আইনটিকে কাজে লাগানোর অজুহাতের অভাব হবে না। ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ই বা নির্ধারিত হবে কীভাবে? 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন অবশ্য। তার মতে, কোনো কিশোরী পরিস্থিতির শিকার হয়ে গর্ভবতী হলে তার ভবিষ্যৎ কী হবে? অথবা মঙ্গলজনক মনে হলে অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধী কিশোরীর ক্ষেত্রে ১৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই তার বিয়ে দেয়া যেতে পারে। প্রতিমন্ত্রীর এই যুক্তি বিবেচনার দাবি রাখে অবশ্য। তবে সেক্ষেত্রে ‘বিশেষ অবস্থা’গুলো কী, তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ থাকা চাই?

আইন করার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিও সমান প্রয়োজন। বাল্যবিয়ের বয়সসীমা ও আইন লঙ্ঘনের শাস্তির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় বিচার হতে হবে দ্রুত। বাল্যবিয়ের প্রবণতা কমে এসেছে বটে, তবে এখনো গ্রামাঞ্চলে এর সংখ্যা অনেক। আমাদের প্রত্যাশা- অনুমোদিত খসড়াটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে বিশেষত এর ১৯ ধারাটি পুনঃবিশ্লেষণ সাপেক্ষে পুনর্বিন্যাস করা হোক। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!