• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী ভোটে অন্যরকম শঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬, ১০:৩৮ পিএম
ব্যতিক্রমী ভোটে অন্যরকম শঙ্কা

ঢাকা: দেশে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্থানীয় সরকারের ব্যতিক্রমী জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা কেউ এ নির্বাচনের ভোটার নন, আবার যারা ভোট দেবেন, তারা কেউই প্রার্থী নন। স্থানীয় সরকারের সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপির জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দেবেন এই নির্বাচনে।

ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে একাধিক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন। এমনকি ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের আটকে রাখা হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, যেসব সংসদ সদস্য এখনো এলাকায় অবস্থান করছেন, তাদের এলাকা থেকে সরে আসার জন্য কমিশন থেকে স্পিকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্পিকার যেন তাদের এলাকা ছেড়ে চলে আসার নির্দেশ দেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা যেন এলাকা থেকে সরে আসেন। তারা (সংসদ সদস্যরা) সম্মানিত ব্যক্তি এবং মর্যাদাসম্পন্ন লোক আশা করি, গুরুত্ব বুঝে তারা এলাকা থেকে চলে আসবেন। এখনো অনেক সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।

শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্বাচনী মালামালও পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। যেহেতু এখানে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন, তাই কেন্দ্রের বাইরে থেকে ভেতরের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। এই নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা কম, তাদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। ভোটারদের আসা-যাওয়ার পথে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।

জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোট ক্রয়ে অর্থ লেনদেন শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, এটা নির্বাচনী অপরাধ। এই নির্বাচনে যেহেতু ভোটারসংখ্যা কম তাই অর্থ লেনদেন হবে এটা আগে থেকেই বোঝা গেছে। এ নির্বাচনে শুধু অর্থ লেনদেন নয়, ক্ষমতার বলে অনেক ভোটারকে আটকে রাখা হতে পারে। কাউকে আবার হুমকি-ধামকিও দেবেন প্রার্থীরা।

একাধিক জেলার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই ভোটার হওয়ার ফলে চড়া দামে ভোট কিনতে হয়েছে প্রার্থীদের। অনেক ভোটার ভোটের দাম নিয়ে দরকষাকষিও করছেন প্রার্থীদের সঙ্গে। ভোট কেনা ছাড়া বিভিন্ন উপহারও দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোট কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনেছেন প্রার্থীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ভোটারদের এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি কোনো প্রার্থী বা ভোটার স্বীকার করেননি। প্রার্থীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভোট কেনার ফলে সংশ্লিষ্ট ভোটার ভোট দিয়েছেন কি না তার প্রমাণ রাখার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। ভোটাররাও নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে ভোটারদের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় এমপি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা। তারা বলছেন, সরকার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট না দিলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। মানিকগঞ্জ জেলার বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রমজান আলী রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। পিরোজপুরের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোটারদের লোভনীয় অফার ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ করছেন। এভাবে বিভন্ন জেলায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা।

দেশের ৬১ জেলার (পার্বত্য তিন জেলা ব্যতীত) ৬৫ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে। প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং পাঁচজন সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ ২১ সদস্যের প্রতিনিধি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ৬১ জেলার ২১টিতেই চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। তবে এসব জেলা পরিষদে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। তিন হাজার ৯৩৮ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১৪৬ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৬৬ জন সাধারণ সদস্য ও ৬৯ জন সংরক্ষিত সদস্য। এ নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন। ভোটকেন্দ্র ৮৩৬টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা এক হাজার ৮৩০টি। প্রতি কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের পৃথক ভোটকক্ষ রয়েছে।

নির্বাচনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না হলেও ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ভোটের দিন মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া ও অবস্থান করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ব্যালটে মার্কিং সিলের বাইরে অন্য কোনো চিহ্ন রাখলে ওই ব্যালটটি বাতিল করা হবে। জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন অনেক জেলায়। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ নির্বাচন বর্জন করেছে।

জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারায় রয়েছেন ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা রয়েছেন। এতে পুরুষ সদস্য আটজন, মহিলা সদস্য সাতজন। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে র‌্যাব ও বিজিবি। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্রতি প্লাটুনে সদস্য ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন) রয়েছে। আর প্যাট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে আছে র‌্যাব। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!