• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করুন: হাইকোর্ট


আদালত প্রতিবেদক নভেম্বর ২৭, ২০১৭, ০৩:২৯ পিএম
ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করুন: হাইকোর্ট

ঢাকা: পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০০ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড বহাল রেখেছে আদালত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৎকালীন বিডিআর এর সদর দফতর পিলখানা দরবার হলে হত্যার সময় চিৎকার করে অপরাধীরা বলেছিলো ভিতরে বাইরে কোনো সেনা অফিসার থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন বেঞ্চের জেষ্ঠ বিচারপতি শওকত হোসেন।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিডিআর বিদ্রোহ হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স’র রায়ের শেষ অংশ পড়া ‍শুরু হয় সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে।

বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। পিলখানায় সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের এ মামলার আপিল শুনানি করতে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন।

রায় পড়ছিলেন কনিষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। এক পর্যায়ে জেষ্ঠ বিচারপতি শওকত হোসেন বলেন, হত্যা কাণ্ডের সময় দরবার হলের ভিতরে অপরাধীরাচিৎকার বলেছিলো দরবার হলের ভিতরে বাইরে কোনো সেনা অফিসার থাকতে পারবে না। এ কথাগুলো বলতে বলতে হত্যাকাণ্ড ঘটনানো হয়। এই বিচারপতি বলেন, এ ধরনের চিৎকার দেশের জন্য জাতির জন্য একটি ম্যাসেস। তিনি বলেন, ইট ইজ কমন ওবজেক্ট।

মতামতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের হত্যাকান্ড প্রথম ঘটেছে। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশে আর তোনোদিন ঘটেনি। এটি একটি দু:খজনক ঘটনা। বাংলাদেশর মানুষের জন্য এ ধরনের ঘটনা প্রথম বলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা পরিকল্পিত। হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভিতরে বাইরে যড়যন্ত্র হয়েছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য একমাত্র সর্বোচ্চ সাজা হওয়াই উচিত। ইট ইজ আনইথিক্যঅলি ডেথ। আসামীদের মনমানসিকতা ছিলো অপরাধ করার মতো।

স্বাক্ষ্য প্রমান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অপরাধীরা ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম রায়ের মতামতে আরো বলেন, এটি ছিলো কমন ইন্টেশন। সকল অপরাধীরা একই ধরনের যড়যন্ত্র করেছিলো। ক্রিমিনাল কনস্প্রেসি ছিলো। এ ঘটনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরী হয়েছিলো।

আদালত তার মতামতে আরো বলেন, ঘটনার সময় অপরাধীদের আচরণ মানুষের মতো নয়, পশুর মতো ছিলো। বিডিআর বিদ্রোহের মতো এতোবড় ঘটনায় গোয়েন্দা বাহিনী তথ্য দিতে ব্যার্থ হয়েছে। আদালত বলেন, বিজিবির মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে কর্তৃপক্ষকে সেগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। বিজিবি অফিসার ও সিপাহিদের মধ্যে সম্পর্ক হবে বিজিবি আইন অনুযায়ী।

হত্যা, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এগুলো ছিলো অপরাধীদের সম্মিলিত উদ্দ্যোগ। বিজিবির সিপাহিদের সাথে কর্তৃপক্ষের আচরণ হবে মানবিক, এডমিনিস্ট্রেটিভ। মনে রাখতে হবে এরা আমাদেরই সন্তান। আমাদের ভাই, আমাদের আত্বীয়স্বজন।

বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও সাজা বাতিলে আসামিপক্ষের আপিলের রায় এটি। রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। এর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রায়ে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাড়ায় ৮৫০ জনে।

এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!