• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্যস্ততার জন্যই ধর্ম থেকে দূরে সরে ছিলাম’


বিনোদন ডেস্ক নভেম্বর ২৪, ২০১৬, ০৭:৫০ পিএম
‘ব্যস্ততার জন্যই ধর্ম থেকে দূরে সরে ছিলাম’

বলিউডের ‘বেড বয়’ হিসেবে খ্যাতি আছে তার। ক্যারিয়ারের শুরুতে করেছেন ফুটপাত, মার্ডার এবং জিহারের মত যৌনতায় ঠাসা সব সিনেমা। কিন্তু একসময় সরে আসেন সেইসব গল্পের সিনেমা থেকে। ‘আওয়ারাপন’ নামের সিনেমা দিয়ে নতুনভাবে জন্ম হয় ইমরান হাশমির। একে একে করেন জান্নাত, রাজ, ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই, অংলি, সাংহাই এবং মিস্টার এক্স এবং হামারি আধুরি কাহানির-এর মত সিনেমা। চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘আজহার’। ভারতের বিতর্কিত ক্রিকেটারের জীবনী নিয়ে নির্মিত ছবিটি এরইমধ্যে বক্স অফিসেও মোটামুটি হিট। এই ছবি মুক্তি উপলক্ষ্যে সম্প্রতি স্পটবয়.কমকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ইমরান। যেখানে ‘আজহার’সহ উঠে এসেছে তার একমাত্র ছেলে অয়নের ক্যান্সার বিষয়ের বর্ণনাও। মিতুল আহমেদ-এর ভাষান্তরে সাক্ষাৎকারটি দেখে নিতে পারেন সোনালীনিউজ.কম-এর পাঠকরা:  

‘আজহার’ ছবির জন্য নিজেকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে কিভাবে তৈরি করলেন?
আমি সব সময়ই ক্রিকেট দেখে অভ্যস্ত। একটা সময় ছিল ক্রিকেটের মধ্যেই ডুবে থাকতাম। আমাদের পুরো ফ্যামিলি একসঙ্গে বসে খেলা দেখতাম। আর হ্যাঁ, আজহার উদ্দিন ছিল আমার পছন্দের সেরা একজন ক্রিকেটার। আর এসবই আসলে ছবিতে কাজে দিয়েছে।

আজহার ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব যখন পেলেন তখন আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
দুই বছর আগে প্রযোজক একতা কাপুর আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমরা  ক্রিকেটার আজহারকে নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে চাই,এবং সেই ছবিতে আজহার চরিত্রটি তুমাকে করতে হবে। আমিতো এমন প্রস্তাবে নেচে উঠলাম।  একটা হিন্দি সিনেমার জন্য যেসব রসদ লাগে তার সবকিছুইতো আজহারের জীবনে ঘটে গেছে। সে ভারতীয় ক্রিকেটের সফল অধিকানায়ক , ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্ক তাকে তাড়া করেছে এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনেও আছে তার নানান ধরনের উত্থান পতন।

আজহার চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে আজহারউদ্দিন কী আপনাকে সহযোগিতা করেছে?
সবকিছু ঠিকঠাক করে ছবির টিম যখন আজহারউদ্দিনের কাছে তার জীবনী নিয়ে সিনেমা বানানোর প্রস্তাব নিয়ে গেলেন তখন তিনি বেঁকে বসলেন। তার জীবনী নিয়ে সিনেমা হউক এবং পুরনো বিতর্কগুলো আবারও চাঙা হউক এটা তিনি চাইলেন না। কিন্তু যখন ‘আজহার’ সিনেমার চূড়ান্ত চিত্রনাট্যটি দেখলেন তখন রাজি হলেন তিনি। যদিও এর আগে থেকেই আজহারের ভিডিও রেকর্ড করা খেলাগুলো এবং ইউটিউবে থেকেও দেখে রপ্ত করার চেষ্টায় ছিলাম আমি। এছাড়া সংবাদপত্রে তাকে নিয়ে বিভিন্ন ফিচার,আর্টিকেলগুলোও সংগ্রহ করতে লাগলাম। এমনকি আজহারউদ্দিনকে আমি বহুবার ফোন করেছি, তার সাথে সব্ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তার চরিত্রের খুঁটিনাটি সে আমাকে বলেছে। এইজন্য সে মাঝেমাঝেই মুম্বাই চলে আসতো, আর আমরা ডিনারে বসে বসে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতাম।

সিনেমা নিয়ে তার কোনো পরামর্শ ছিল?
আসলে সে সিনেমাটা নিয়ে কিছুটা ভীতশ্রদ্ধ ছিল। কিভাবে ছবিটিতে তাকে তোলে ধরা হবে, আর মানুষ কিভাবে তা গ্রহণ করবে এইসব নিয়ে কথা বলতো। কিংবা কতোটা তাকে বাস্তবিক আর কতোটা নাটকীয়ভাবে তুলে ধরা হবে এসব বিষয় নিয়ে তিনি উদ্বীগ্ন থাকতেন।

আজহার উদ্দিন কবজির শটগুলোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন, এটা কিভাবে রপ্ত করলেন?
কবজির শটগুলো আয়ত্ব করতেই আমার চারমাস লেগে গিয়েছিল।

একটু আগে আপনি বললেন যে আজহার তার জীবনে নানান ধরনের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সেগুলো সিনেমার মাধ্যমে আপনার উপলব্ধি কী?
যখন কোনো খেলোয়ার কিংবা সেলেব্রেটিদের মামলায় জড়িয়ে কোর্টে যেতে হয় তখনও তাদেরকে যারা নিস্বার্তভাবে ভালোবাসেন তারা তার জন্য চোখের জল ফেলেন। তারা কোনো তথ্য প্রমানাদির ধার ধারে না। তারা তাদের নিজের মত করে পুরো বিষয়টি উপলব্ধি করেন। বস্তুত এরজন্যই নিজেকে নির্দোষের কোনো প্রমানাদি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত আজহার ২০১২ সালে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

যতদূর জানি, ছবিটির শুটিংয়ের সময় আপনার ব্যক্তিগত ঝামেলা ছিল। আপনার একমাত্র ছেলে তখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এসময় কি কাজের ক্ষেত্রে আপনার ছেলের মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রভাব ফেলেছে?
শুটিংয়ের সময় নয়, বরং আমি যখন প্রথমবার ‘আজহার’ সিনেমা নিয়ে একতা কাপুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, এবং আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে চলে তখন আমার ছেলে অয়নের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর আমরা শুটিং করি। অন্ধকারকে জয় করে আমার ছেলে এখন মুম্বাই ফিরে এসেছে।

যখন ছেলে ক্যান্সার ধরা পড়লো তখন কি আপনি ভেবেছেন যে, কেন আপনার ছেলের বেলায় এমনটি হল?
ছেলের বাবা হিসেবে প্রথমেই আমি এটা ভেবেছি। কিন্তু পরক্ষণই ভেবেছি অন্য যেকোনো সন্তানের ক্ষেত্রে এমনটি হলেওতো তাদেরও একই অনুভূতি হত। এরপর আমি মেনে নিয়েছি ছেলের ক্যান্সার হওয়াটাকে। ভেবেছি, যা হওয়ার তাতো হবেই, বিশ্ব সংসারে আমিতো সবকিছু এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখি না। এরপর থেকেই ছেলের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বাবা হিসেবে সংগ্রাম করি। ছেলেকে ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলার সংগ্রামে অন্য এক শক্তি যেন কোথায় পাই। যারফলে শেষ পর্যন্ত আমি সফল হয়েছি। এখন যখন ছেলেকে নিয়ে সেই দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকাই বারবার মনে হয়, এত শক্তি আর উৎসাহ আমি কোথায় পেয়েছিলাম!

এরপর থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন?
আমি আগে থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী একজন মানুষ। কিন্তু কোনো কারণে ধর্মকর্ম থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এ ঘটনার পর আমি প্রতিরাতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।

ধর্ম থেকে দূরে সরে ছিলেন কেন?
আমি জানি না আসলে কারণটা। তবে ব্যস্ততার জন্যই আসলে ধর্ম কিংবা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে ছিলাম।

ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে উঠা একমাত্র ছেলে আয়ানের সঙ্গে ইমরান হাশমি...

ইন্ডাস্ট্রিতো আপনার সংকটে পাশে ছিল। সালমান খান, শাহরুখ খানদের মানসিক সমর্থনতো ছিল। আর অমিতাভ বচ্চনতো আপনাকে চিঠিই লিখেছিলেন….?
তাদের সমর্থনের বিষয়টি আমার কাছে সত্যিই হৃদয়ছুঁয়ে যাওয়ার মত। মিস্টার বচ্চনতো আমাকে হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন যখন আমি তাকে আমার লেখা ‘দ্য কিস অব লাইফ’ পাঠিয়েছিলাম। আসলে বইটি পড়ার পরেই তিনি আমাকে চিঠি লিখেছিলেন। এগুলো আমার জন্য পরম পাওয়া।

আপনি ইদানিং প্রায়শই বলেন যে, আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন…
নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের বিষয়টি ‘আওয়ারাপন’ ছবি থেকে। মানে আওয়ারাপন ছবিটিই আমার টার্নিং পয়েন্ট। এরপর ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বাই, সাংহাই, দ্য ডার্টি পিকচার এবং এখন আজহার। এগুলোর মধ্যেই আসলে আমার নিজেকে নতুনভাবে আমি আবিষ্কার করেছি। আমি জানি মানুষ আমাকে ‘সিরিয়াল কিসার’ হিসেবে চেনে, কারণ তারা আমাকে সেভাবে দেখেই অভ্যস্ত। আর সেই ধারণাতেই এখনো অনেকে বদ্ধমূল!

কিন্তু ‘আজহার’ ছবিতেও তো নার্গিস ফাখরির সঙ্গে আপনার চুমুর দৃশ্য আছে…?
না না, শুধু নার্গিস ফাখরির সঙ্গে নয়। আজহার ছবিতে প্রাচী দেশাই এবং নার্গিস ফাখরি দু’জনের সঙ্গেই আমার চুমুর দৃশ্য রয়েছে।

চুমুর দৃশ্যে কে বেশি সহজ ছিল, নার্গিস নাকি প্রাচী…?
প্রায় সব নায়িকাই এখন চুমুর দৃশ্যে সহজ, স্বাভাবিক। আর ‘আজহার’ ছবিতেও চুমুর দৃশ্যগুলো নির্মাতা টনি ডি’সুজা খুব স্বাভাবিকভাবেই টেক করেছেন। ফাখরি আর প্রাচীও দৃশ্যগুলো সহজ করে দিয়েছে।

আপনার ছেলে অয়নের এখন কি অবস্থা?
অসাধারণ! তার অফুরাণ প্রাণ শক্তিইতো আমার সম্বল। সে এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য প্রচুর কাজে কর্মেও দারুন ব্যস্ত সে। যেমন এখন কিক-বক্সিং আর ড্যান্সিং নিয়ে সে প্রচুর ব্যস্ত!

‘দ্য কিস অব লাইফ’ বইটি লেখার চিন্তা কিভাবে পেলেন?
আসলে হুসেন জায়দি-ই আমাকে বইটি লিখতে উদ্ভুদ্ধ করেছে। আজহারের সেটে একদিন এসে জায়দি আমাকে বললো, ছেলে অয়নকে নিয়ে আপনার লড়াইয়ের গল্প মানুষকে জানানো উচিত। যা ক্যানসার আক্রান্ত প্রত্যেকটি বাবা-মাকে অনুপ্রাণিত করবে।

সোনালীনিউজ/ঢাক/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!